সিরিজা - একটি উপন্যাস aka রজতের কামলীলা_Written By Lekhak (লেখক) [চ্যাপ্টার ১৪]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2014/09/aka-written-by-lekhak_55.html

🕰️ Posted on September 8, 2014 by ✍️ Lekhak

📖 2677 words / 12 min read


Parent
সিরিজা - একটি উপন্যাস Written By Lekhak (লেখক) ।। চোদ্দো ।। খুব ইচ্ছে করছিল দিবাকরের খাটে শুয়ে শুয়ে রজতের মতন হয়ে যেতে। রজত যেমন সিরিজাকে আদর করে। পাশ ফিরে সিরিজার বুকে যদি একটা চুমু খাওয়া যেত। ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে যদি এমনটাই বলা যেত - "চলো না আজ থেকে আমরা সত্যি সত্যি স্বামী-স্ত্রী হয়ে যাই। কি একটা বিবাহিত পুরুষকে শরীর দিয়ে বসে আছ। ও তো তোমাকে পেয়ে ফায়দা লুঠছে খালি নিজের মতন করে। তোমার সত্যিকারের দীওয়ানা যদি কেউ থাকে তাহলে এই অধম দিবাকর ছাড়া তো আর কেউ নয়। এমন একটা সাধাসিধে লোককে পেয়েও বারে বারে ভুল বুঝছ। সিরিজা কবে তোমার ভুল ভাঙবে। আমি কি সত্যি তোমার কখনও হতে পারি না? এই সিরিজা বল না একবার? সিরিজা।"  - "আপনি তখন কি আমায় বলতে চাইছিলেন?" সিরিজার গলা শুনে দিবাকর যেন আকাশ থেকে পড়লো।  -- "আমি?  - "হ্যাঁ। তখন আমার পথ আগলে আমায় কি বলতে চাইছিলেন।"  -- "হ্যাঁ মানে।"  - "বলুন। আমি শুনছি।" দিবাকর মুখটা ঘুরিয়ে দেখলো সিরিজা ওর দিকেই চেয়ে আছে। এবার ওর চাউনিতে যেন একটা বিশ্বাস ফিরে এসেছে। খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে চাইছে। একটু আগে যে তাচ্ছিল্য ভাবটা ছিল, সেটা এখন নেই। মনে হয় রজতের শ্বশুড় মশাইটা এসে সব ওলটপালট করে দিয়েছে। সিরিজার অমন মনভোলানো চাউনি দিবাকর আগে কখনও দেখেনি। ও ভালো করে সিরিজাকে দেখছিল। কাল রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মালকিনি এখন ওকে খুব সহজ করে নিয়েছে। স্তনবাহার ব্লাউজের আড়ালে ঢাকা পড়ে রয়েছে। দিবাকর ওদিকে তাকাচ্ছে না। কারন ও এখন অনেক পরিবর্তিত। কাল রাতে রক্ত যেমন টগবগ করে ফুটছিল, এখন ওর রক্ত অতটা গরম নয়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই দিবাকর সিরিজাকে বললো, "রজতের স্ত্রী ওর বাবাকে পাঠিয়েছে। এখন তোমার কথা জেনে গেলেই মুশকিল। ফিরে গিয়ে মেয়েকে সব বলবে। তখন আবার আর এক কান্ড হবে।"  - "কিন্তু আপনি যে বলছিলেন খুব দরকারী কথা আছে আমার সঙ্গে।"  -- "বলতে তো চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন কি সেটা বলা যাবে? লোকটা যতক্ষণ না যাচ্ছে ততক্ষণ তো এভাবেই শুয়ে থাকতে হবে। রজত বলেছে আমাকে তোমার স্বামীর ভূমিকা পালন করতে। উনার সামনে যদি শেষ পর্যন্ত যেতে হয়, তখনতো তোমাকেও ঐ একই রোল প্লে করতে হবে। তোমার কি তখন ভালো লাগবে?"  - "আমি যদি বলি আপনি সত্যিই আমার স্বামী।"  -- "না না সত্যি কেন হব? ওটাতো মিছি মিছি একটা অভিনয় মাত্র। লোকটাকে বুঝতে না দেওয়ার কৌশল। তোমাকে কিছু বলতে হবে না। আমি দেখবে নিজেই ঠিক ম্যানেজ করে নেব। আগে একটু দেখে নিই। শেষ পর্যন্ত কি হয়।" দিবাকর কান খাড়া করে শুনতে লাগলো, পাশের ঘরে রজত ওর শ্বশুড় মশাই এর সাথে কি কথা বলছে। লোকটা মনে হয় বেশ জোরে জোরে কথা বলছে, আর রজতও সেই সাথে চেঁচাচ্ছে। আওয়াজটা যখন আরো বেশী একটু তীব্র হোল তখন দিবাকর সিরিজা দুজনেই পরিষ্কার শুনতে পেল ওরা বাইরের ঘরে বসে কি কথা রজত বলছে, "আপনাকে তো তখন থেকে বলছি। এখন যান না। সাত সকালে এসে ঝ্যামেলা পাকাচ্ছেন। আমি তো বলছি, পরে একদিন আসুন। এখন একটু অসুবিধে আছে।" শ্বশুড় মশাই বলছে, "আমি তো ঝেমেলা পাকাচ্ছি না। তুমিই অযথা চিৎকার করছো। মেয়ের শাড়ীগুলো আলমারীতে পড়ে রয়েছে। এক কাপড়ে বেরিয়ে গেছে তোমার ফ্ল্যাট থেকে। এখন ওগুলো খালি আমাকে দিয়ে দাও। তাহলেই তো সমস্যা মিটে যায়। আমি তো চাবি নিয়েই এসেছি।"  -- "দূর মশাই। আপনাকে তো তখন থেকে বলছি। আমার বন্ধু এসেছে, কালকে। ওর স্ত্রী রয়েছে সাথে। ওরা রাত্রি থেকে আমার ফ্ল্যাটে রয়েছে। এখন আপনার জন্য ওদের ঘুম ভাঙাতে যাবো কেন শুধু শুধু? আপনি তো অন্যদিনও এসে নিয়ে যেতে পারবেন। আপনার মেয়ের শাড়ী রেখে আমার কি হবে? না ওর শাড়ী পড়ে আমি কি রাস্তায় ঘুরে বেড়াব? ফালতু ঝামেলা করছেন।" দিবাকর বুঝতে পারছিল রজত বেশ ঝাঁঝ দিয়ে কথা বলছে ওর শ্বশুড়ের সাথে। শ্বশুড়ও ছাড়বার পাত্র নয়। মনে হয় রজতের চরিত্রটা জানে। শোবার ঘরের দরজাটা একে ভেজানো রয়েছে। ভেতরে সস্ত্রীক বন্ধু আছে না রজতের নতুন কোন বান্ধবী আছে সেটাই যাচাই করে নিতে চাইছে। কথার ফাঁকে ফাঁকেই ও লক্ষ্য করলো বিছানায় শোওয়া অবস্থাতেই সিরিজা বেশ কিছুটা এগিয়ে এসেছে ওর দিকে। এবার একটা হাত রেখেছে ওর বুকের উপর। কেমন একটা ভয়ে ভয়ে দিবাকরকে বলছে, "দিবাকরদা কিছু হবে না তো? আমার বেশ ভয় করছে। আপনিও আমাকে একটু জড়িয়ে ধরুন না। দুম করে উনি যদি এই ঘরে ঢুকে পড়েন, তাহলে হয়তো সন্দেহ কাটবে। আমাকে একবার জড়িয়ে ধরুন। আমি কিছু মনে করবো না।" দিবাকর অবাক হয়ে চেয়ে আছে সিরিজার দিকে। ভাবছে প্রথম আর শেষবারের মতন সিরিজাকে একবার জড়িয়ে ধরবে কিনা। ওর শরীরে শরীর ঠেকালে নাকি হাজার পাওয়ারের বিদ্যুত তরঙ্গ বয়ে যায়। অনেকটা ইলেকট্রিকের শক লাগার মতন। রজতই ওকে বলেছে। এখন সিরিজা যেচে আহবান করছে। একবার ওর শরীরের বিদ্যুতপৃষ্ঠ বা তড়িতাহত হলে ক্ষতি কি? এতে তো মরার ভয় নেই। বরং নতুন করে বাঁচার স্বাদ পাবে দিবাকর। ও ভাবছে, কিন্তু তখনও সিরিজার শরীর জড়াতে একটু ইতস্তত করছে দিবাকর। কাহিনীতে যে এমন মোচড় আসবে নিজেও তো কল্পনা করতে পারেনি। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতন হচ্ছে। সব যে গুলিয়ে যাচ্ছে দিবাকরের গো। সব যে গুলিয়ে যাচ্ছে। সিরিজাকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে একটা চুমুও খেতে ইচ্ছে করছিল দিবাকরের। চুমু যদি খেয়েও ফেলে কি এমন এসে যাবে তাতে? হাজারহোক ক্ষণিকের স্বামী হয়ে একটা ইচ্ছেতো পূরণ করতেই পারে দিবাকর। ওদিকে শ্বশুড় মশাই গজরাচ্ছেন। এদিকে সিরিজা নতুন রূপে ছোঁয়া দিয়েছে। রজত সিরিজাকে ওর কাছে হ্যান্ডওভার করেছে, দিবাকরও স্বামীরুপে নিজে বেশ গর্ব অনুভব করছে। চুমুটা এর সাথে দিলে বেশ মানানসই হবে। চোখদুটো বন্ধ করে একবার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে তাহলে হয়েই যাক। সিরিজার গায়ে পড়া ভাবটা ওর যে মনে বেশ দাগ কেটে ফেলেছে। এখন এ সুযোগের সদব্যাবহার করতেই হবে ওকে। এদিক সেদিক ভাবলে আর চলবে না। বেশ খানিকটা কাছাকাছি হয়ে ঠাসাঠাসি হয়ে যাচ্ছিলো দুজনে। দিবাকর চোখ বন্ধ করে চুমু খাওয়ার উদ্যোগটা নিতেই যাচ্ছিলো, এমন সময় সিরিজা বলে উঠলো, "আমি কি তাহলে ভুল করলাম?" দিবাকর ভাবল যে কথাটা এতক্ষণ ও বলার চেষ্টা করছিল সেটা সিরিজাই নিজে বলে দিল, এটা কেমন হলো? শ্বশুড়মশাই এসে কি তাহলে রজতের সাথে ওর দূরত্বটা বাড়িয়ে দিল? না কি কালকের মতন আবার নতুন করে একটা স্বপ্ন দেখছে দিবাকর। একটু পরে রজত ঘরে ঢুকে ওর ঘুম ভাঙালো বলে। চিন্তা করতে করতেই ও লক্ষ্য করলো শাড়ীর আবরণটা বুকের উপর থেকে সরে গিয়ে সিরিজার বুকের খাঁচাটা বেশ খানিকটা উন্মুক্ত করে ফেলেছে। এখন ও আর স্বপ্ন দেখছে না সিরিজার বুকের খাঁচাটাই খুব কাছ থেকে দেখছে। একদম সত্যি সত্যি। যেভাবে আসল স্বামীরা বউ এর বুক দেখে নিজেদের কামভাব জাগ্রত করে, দিবাকরের এখন সেরকমই হচ্ছে। রজতের থেকে এখন দিবাকরকেই বেশী নিরাপদ মনে হচ্ছে সিরিজার। নইলে এত ঘনিষ্ঠ হয়ে আসে কি করে? দিবাকরের সেরকমটাই মনে হলো। ও সিরিজার দিকে পাশ ফিরে ওর চোখে চোখ রেখে নরম গলায় বললও, "আমাকে কিন্তু তা বলে ভুল বুঝো না সিরিজা। আমি আসলে যেটুকু করেছিলাম, কাল মদের ঘোরেই করেছিলাম। তোমাকে দেখার পর থেকে নিজেকে উপলব্ধি করলাম, কেমন যেন যেন বদলাতে শুরু করেছি।" একটু চুপ করে থেকে আবার বললো, দিবাকর, "আমার ভেতরে কেমন একটা ভয়ঙ্কর জেদ চেপে বসল। জানি না এটা হয়তো বাড়াবাড়িই হয়ে গেছিল। নইলে আমিই বা তোমার আর রজতের মধ্যে খামোকা দূরত্ব তৈরী করতে যাবো কেন? তোমারও রজতকে পছন্দ হয়েছে, রজতেরও তাই। এরমধ্যে আমি মাথা গলিয়ে আর কি করবো?"  - "আপনি কোন মেয়েকে কোনদিন ভালোবাসেন নি?"  -- "বেসেছিলাম একজনকে। কিন্তু সে যার হওয়ার কথা ছিল, তার তো হলো না?"  - "কার হলো?"  -- "কারুরই হলো না। এক পাখীকে দুজনে ধরতে গিয়ে পাখীই শেষ পর্যন্ত গেল উড়ে।"  - "দুজন কে কে?"  -- "একজন আমি। আরেকজন....."  - "আরেকজন?"  -- "তুমি যাকে হৃদয় দিয়ে বসে আছ সে।"  - "কে?"  -- "রজত। আমার প্রিয় বন্ধু। তোমার হবু স্বামী।" সিরিজা কথাটা শুনল। কিছুক্ষণের জন্য চুপও করে গেল। দিবাকরের শুধু এটাই মনে হতে লাগলো পৃথিবীর সব থেকে বোকা লোকও বোধহয় ওর থেকে চালাক। না হলে এসব ফালতু বাকোয়াজ করে এমন সুবর্ণ সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে? চুমু খেতে গিয়ে আবার পুরোনো কথাটা টেনে আনার কি দরকার ছিল? বেশ তো ঘনিষ্ঠতা হচ্ছিল, তা না রজতের কথা তুলে সিরিজার মনটাকেই ও দিল বিগড়ে। আর কি সিরিজার মন এভাবে পাবে ও আর? নিজেকে বোকার হদ্দ মনে হচ্ছে। ঠিক একই রকম ভুল করেছিল ও রেশমির ক্ষেত্রে। শেষমেষ রেশমির শরীরটা শুষে নেয় রজত। দিবাকরের জন্য আস্ত আর কিছুই পড়ে থাকে না। ছোট্ট একটা ভুলে আফসোস সারাজীবন করতে হচ্ছে। এখন যদি সিরিজাও ওকে মন না দিয়ে বসে বাকী জীবনটা আফসোসে আফসোসেই কেটে যাবে দিবাকরের। শুধু রেশমি আর সিরিজা কেন? লাইন দিয়ে একটার পর একটা মেয়ে আসবে, আর শুধু হাত নেড়ে টা টা করে চলে যাবে। সঙ্গমসুখের মজাটা অধরাই থেকে যাবে সারা জীবন। দিবাকরের আর রতিস্বাদ এ জীবনে পূরণ করাই হবে না। ও কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। এমন সময় রজত দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। সিরিজা আর দিবাকরকে ওভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ও বললো, "একি, তোমরা যে দেখছি সত্যিকারের স্বামী-স্ত্রী হয়ে গেছ। বুড়োটাকে ভাগিয়ে দিয়েছি। এবার তোমরা উঠে পড়।" দিবাকর উঠে পড়লো। কিন্তু সিরিজা উঠলো না। রজত বললো, "লোকটা খুব সন্দেহ বাতিক। আমার কথা বিশ্বাস না করেই চলে গেছে। বলেছে রীতাকে সাথে নিয়ে কাল সকালে আবার আসবে। কোনরকমে চেঁচামেচি করে ভাগিয়েছি। এখন কাল সকালের আগে সিরিজাকে অন্যত্র পাঠানোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ভাবছি ওকে আজ রাত্রিটার জন্য কোথাও পাঠিয়ে দেব।"  - "কোথায় পাঠাবে?"  -- "কেন, তোমার বাসায়। ওটাই তো সবথেকে নিরাপদ প্লেস আমার কাছে। কাল ওরা চলে গেলে আবার আমি সিরিজাকে তোমার বাসা থেকে ফেরত নিয়ে আসবো। ততক্ষণ তোমার স্বামীর রোলটা আরো একদিনের জন্য আমি এক্সটেন্ড করে দিলাম। এইটুকু উপকার আমার কথা ভেবে একটু করে দিলে আমি খুব কৃতজ্ঞ থাকব তোমার কাছে। আশাকরি তোমার এতে কোন অসুবিধে হবে না। কি বলো? " কিছুটা বোকার মতন আর কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার মতন। দুটো মিলিয়ে মিশিয়ে রজতের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দিবাকর বললো, "না অসুবিধে ঠিক হবে না। তবে সিরিজা কি রাজী হবে?" দুজনেই তখন সিরিজার মুখের দিকে তাকিয়েছে। সিরিজাও উঠে বসেছে। রজতের দিকে না তাকিয়ে দিবাকরের দিকেই তাকিয়ে দেখছে বেশী। রজত কিন্তু বুঝতে পারছে না সিরিজা আসলে হ্যাঁ বলছে না না দিবাকর বুঝে গেছে সিরিজা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কি বোঝাতে চাইছে। মুখে না বললেও চোখের ভাষায় ওর বাসায় যাওয়ার সন্মতিটা জানাচ্ছে সেটা এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। এই নতুন সকালে রজত কি দারুন একটা উপহার দিল ওর জন্য। কালকের সব ব্যাথাভরা দূঃখ নিমেষের মধ্যে সব উধাও। দিবাকরকে আর কামনার জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মরতে হবে না। রাত্রিবেলা সিরিজা ওর বাসায় থাকবে। এতো শুনেই দিবাকরের শরীরের আনন্দের নার্ভগুলো নড়াচড়া করতে শুরু করেছে। জড়সড় শরীরটা এবার টাট্টু ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে। দিবাকর বুঝলো সিরিজা খুব বুদ্ধিমতি। রজত সন্দেহ করবে বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। কিন্তু উত্তরটাও নিঃশব্দে ওকে যেন বুঝিয়ে দিয়ে গেল। আজ রাত্রিতে ও তার মানে দিবাকরের বাসায় থাকছে। দিবাকরের আর বড় পাওনা এর থেকে কি বা হতে পারে। ওকে তখনকার মতন বেশ খুশী খুশী দেখাল। রজতকে আস্বস্ত করে দিবাকর বললো, "কলিংবেলটা তখন বেজে ওঠাতে আমিও বেশ ঘাবড়ে গেছিলাম বুঝলে। যাক বুড়ো যখন চলে গেছে তখন তোমার আর কোন চিন্তা নেই। এখন তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।"  -- "সে তো বুঝলাম। কিন্তু কালকে যে আবার বুড়ো রীতাকে নিয়ে আসবে বলেছে।"  - "তাতে কি হলো? সিরিজা তো তখন তোমার কাছে থাকছে না। আমার বাসায় থাকলে তোমারও কোন চিন্তা নেই।"  -- "সে তো বুঝলাম। কিন্তু কাল ওরা এসে কতক্ষণ এখানে থাকবে কে জানে? আমার হয়েছে এক জালা। চলেই যখন গেল জিনিষপত্র গুলো সাথে নিয়েই তো যেতে পারত। এতদিন বাদে খেয়াল পড়েছে।"  - "জিনিষ বলতে আলমারীতে রাখা কিছু শাড়ী এই তো? ও খালি করতে আর কতক্ষণ লাগবে? এক-দু ঘন্টার মধ্যেই সব ঝেমেলা মিটে যাবে। তারপরে তুমি চিরকালের জন্য নিশ্চিন্ত।" রজত একটা সিগারেট ধরিয়ে বললো, "আচ্ছা দিবাকর, একটা কাজ করলে হয় না?"  - "কি?"  -- "ধরো তুমি সিরিজাকে তোমার বাসায় রেখেই আবার আমার কাছে ফিরে এলে। রাতটা তুমি আমি এখানেই কাটালাম কালকের মতন। আর সিরিজা তোমার বাসায় রয়ে গেল। সকালে ঝেমেলা মিটে গেলে তারপর তোমার ওখান থেকে ওকে নিয়ে এলাম।" খানিকখনের জন্য আবার বেশ বোকা হয়ে গেল দিবাকর। বললো, "কিন্তু সিরিজা কি আমার বাসায় একা থাকতে পারবে?"  -- "কেন পারবে না? তোমার বাড়ীতে তো কোন ঝেমেলা নেই। আমার বরঞ্চ তুমি এখানে থাকলে একটু সুবিধা হবে। রীতা আর রীতার বাপটাকে তুমি থাকলে ভালো হ্যান্ডেল করতে পারবে।" রজতের কথার জবাব দিতে পাচ্ছিল না দিবাকর। বোকার মতন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কি বলবে এই ভেবে চেয়েছিল। মনে মনে একবার গালাগাল দিল রজতকে। শালা মহা ঢ্যামনা। খালি থেকে থেকে মত চেঞ্জ করে। এই একটু আগে কি বললো, আবার এখন মত পাল্টে অন্যকথা বলছে। সিরিজাকে যেন কেনা বাদী বানিয়ে ফেলেছে। সবই ওর ইচ্ছেমতন হবে। দিবাকরও ওর বিনা পয়সার গোলাম। ইচ্ছামতন ফাইফরমাস খাটবে। যা বলবে তাই করবে। ওর আর কোন ইচ্ছে আল্লাদ পূরণ হবে না ঐ ঢ্যামনাটার জন্য। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, এমন সময় সিরিজা বসার ঘরে চা নিয়ে এসে ঢুকে সব সমস্যার সমাধান করে দিল। কাপ দুটো টেবিলের উপর রাখতে রাখতে মুখ নীচু করে ওদের দুজনকেই শুনিয়ে বললো, "আমিই বা একা ওখানে থাকব কেন? আমার ভয় করবে না? আমি থাকলে দিবাকরদাকেও থাকতে হবে আমার সাথে। আমি একা একা ঐ বাসায় কিছুতেই থাকব না।" সিরিজা চা টা রেখে মুখটা তুলে এমন ভাবে দিবাকরের দিকে তাকালো, দিবাকরের মনে হোল কাল থেকে যাকে নিয়ে তপস্যা করছিল এবার সত্যি সত্যিই তার সিদ্ধিলাভ হোল। ওর দিকে এমন ভাবে কোন মেয়ে কোনদিন তাকায় নি। রজত আর দিবাকরের থেকে একটু দূরে বসল সিরিজা। দিবাকর সিরিজাকে দেখছিল। ও যেন আর এখন রজতের সামনে দিবাকরের শরীরটাকে ছুঁতে চাইছে না। কিন্তু রাত্রে দিবাকরের বাসায় ওর সাথে যে লেপ্টে থাকবে না তার কি কোন গ্যারান্টী আছে? সিরিজার এই পরিবর্তন দেখে তো দিবাকর চিটেগুড়ের মাছি হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। ওর সাথে রজতের মতন রতিক্রিয়ায় সক্রিয় অংশ নিতে পারলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে। সিরিজা যেন ঐ চেয়ারে বসেই এখন থেকেই আরাধনা করছে ওকে। তুষ্ট করতে চায় দিবাকরকে। একটা সিগারেট ধরিয়ে দিবাকরও মনে মনে বললো, "অপূর্ব! এই না হলে আমি তোমার পূজারী? এখন শুধু রজতের মতন পূজো করাটা খালি শিখতে হবে।" সিরিজা ওর চোখের দৃষ্টিটা দিবাকরের ওপর থেকে সরাচ্ছিলই না। দিবাকর বুঝতে পারছিল ওর দৃষ্টির মধ্যে কোন ছলনা নেই। সকালবেলা ওকে দূঃখ দিয়েছিল, আর এখন নিজেই মনস্তাপে জর্জরিত হয়ে আপ্লুত হয়ে গেছে দিবাকরের উদারতার ঝর্ণা জলে। তাল কাটল রজত। চায়ের কাপটা মুখে নিয়ে সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "চলো সিরিজা আজ তোমাকে নিয়ে একটু বাইরে বেরোই। ঘরে বসে থেকে থেকে আর ভালো লাগছে না। তোমারও ভালো লাগবে। সারাদিন তোমাকে নিয়ে ঘুরব। তারপর সন্ধেবেলা তোমাকে দিবাকরের ওখানে ড্রপ করে দেব। কালকে আবার নিয়ে আসবো।" রজতকে অবাক করে সিরিজা বললো, "দিবাকরদা যাবে আমাদের সঙ্গে?" উত্তরটা শুনে রজত শুধু অপ্রস্তুত হোল না। তালের সাথে সাথে এবার যে ওর সুর ল সব কেটে গেছে। সেটাই বুঝতে পারলো। খুশী হোল দিবাকর। রজত যে ওকে এতদিন ঠুনকো ভেবে এসেছে, আজ যেন তার পরিসমাপ্তি ঘটল। অনেক শরীরপাত করে সিরিজাকে রজত হাতছাড়া করতে চলেছে। আগাম পূর্বাভাস এখন থেকেই তা পাওয়া যাচ্ছে। রজত খুব একটা রিয়্যাক্ট করলো না সিরিজার কথা শুনে। বিরক্তি মনে এলেও সেটা মুখে প্রকাশ করলো না। একে দিবাকরের কাছ থেকে সাহায্য চাইছে। তার উপর সিরিজাও দুম করে কথাটা বলে ফেলেছে। এই অবস্থায় দিবাকরকে সাথে না নিলে দিবাকরও খারাপ ভাবতে পারে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বরঞ্চ কাল রাতে ও যে ইচ্ছাটা প্রকাশ করেছিল দিবাকরের কাছে সেটাই নতুন করে তুলে ধরলো।  -- "তোমাকে কাল গল্প করতে করতে বলছিলাম না। চল কোথাও ঘুরে আসি। তিনজনে মিলে দুতিনদিনের জন্য কোথাও বেরিয়ে এলে মন্দ হবে না।"  - "তিনজনে? তুমি তো বললে সিরিজাকে নিয়ে ঘুরে আসবে। আমাকে একটা জায়গা ঠিক করে দিতে বলছিলে।"  -- "না না তুমিও বাদ যাবে কেন? গেলে তোমাকে সাথে নিয়েই যাবো। সিরিজা তো আর তোমার ব্যাপারে আপত্তি করবে না। কি বল সিরিজা? দিবাকরও চলুক আমাদের সাথে। কি বল?" রজত সিরিজার দিকে মুখ ঘুরিয়ে কথাটা জিজ্ঞাসা করলো। সিরিজা মাথা নেড়ে বললো, "হ্যাঁ চলুক না, ক্ষতি কি?" কথাটা শুনে দিবাকরের ভেতরটা টগবগ করে ফুটছিল। অবশ্য আনন্দে। বুঝলো সিরিজা এখন কথায় কথায় মাথা নাড়বে। দিবাকরকে বাদ দিয়ে বেড়ানো আর সুখের হবে না। রজতকেই ও এখন ফেউ মনে করছে। রজত বললো, "আমি চাইছিলাম কাছাকাছি ভালো একটা জায়গা। তাড়াতাড়ি জায়গাটা ঠিক করো তো। কাল সব ঝ্যামেলা মিটে গেলেই আমরা বেরিয়ে পড়ব। বড্ড অস্থির হয়ে পড়েছি। ভাবছি দু একদিনের জন্য নয়। তিনজনে মিলে একটা লম্বা ড্রাইভ দেব। মোটামুটি সাত দিনের জন্য।"  - "সাত দিন? সে তো বেশ লম্বা সফর। একসাথে দু-তিনটে জায়গা ঘোরা হয়ে যাবে।" দিবাকর অবাক হয়ে বললো।  -- "ভালোই তো। আমি খালি অফিস থেকে একটা লম্বা ছুটি নিয়ে নেব। তারপর যেদিকে মন যেতে চায়। তুমি আমি আর সিরিজা।" রজতের কথা শুনে সিরিজা এবার রজতের দিকেই তাকাচ্ছিল। কি যেন বলতে চেষ্টা করলো। রজত ওকে বাধা দিয়ে বললো, "দারুন একটা প্ল্যান এসেছে মাথায়। চট করে কাজটা সেরে নিতে হবে। তোমরা বরঞ্চ বসো। আমি টুক করে একটু ঘুরে আসছি।" দিবাকর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, "কোথায়?"  -- "কোথায় আবার? অফিসে। ভাবছি ছুটিটা আজকেই নিয়ে নেব। কালকে আমরা তিনজনে বেরিয়ে পড়ব।" সিরিজা আর দিবাকর দুজনেই এবার মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। রজত ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললো, "এখন বাজে ঠিক দশটা। আমি দুটোর মধ্যে ঘুরে আসছি। ততক্ষণ তোমরা দুজনে একটু গল্পগুজব করে চানটান করে রেডী হয়ে নাও। আজকে ভালো কোন হোটেল লাঞ্চ করবো একসাথে।" কথাটা শুনে বিশ্বাসই হচ্ছিল না দিবাকরের। রজত যে এখনই সিরিজাকে তিন-চার ঘন্টার জন্য ওর কাছে রেখে যাবে, এমন শোনাটাই অদ্ভূত। সোফাটা ছেড়ে রজত যখন তৈরী হওয়ার জন্য উঠে পড়লো দিবাকর দেখলো সিরিজা আবার ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এই তিন-চার ঘন্টা রজতের অনুপস্থিতিতে জমাটি ব্যাপার কিছু হবে নাকি এবার? সিরিজা দিবাকরের দিকে তাকিয়ে বললো, "দিবাকরদা আর একবার চা খাবেন? তা হলে করে আনি আপনার জন্য।"
Parent