পরিবর্তন_Written By mblanc [প্রথম পর্ব - ১.২ ব্যস্ত মানুষ]
পরিবর্তন
Written By mblanc
প্রথম পর্ব
।। ১.২ ।।
ব্যস্ত মানুষ
ল্যাবে ঢুকতে ঢুকতে এগারোটা বেজে গেল।
- "কি ব্যাপার ড. গুপ্ত? আপনার তো সচরাচর দেরি হয় না... সব ভাল তো?" দীপালি বলল তার অফিস থেকে।
দীপালি এই ব্র্যাঞ্চের এইচ-আর কাম রিশেপশনিষ্ট। যেমন মিষ্টি গলা তেমনি টিভির মডেলদের মত চেহারা। কিন্তু যে কোনো ঝামেলা সামলে নিতে পারে, আর কেউ ওর সাথে ফাজলামি করতে যায় না ওর ধারালো জিভের ভয়ে। সেটাই স্বাভাবিক, যা-তা পাবলিক এই অফিসে ঐ পোস্ট ধরে রাখতে পারত না।
- "গুড মর্নিং দীপালি! ঐ একটু ঠান্ডা লেগেছে আর কি। নাথিং সীরিয়াস, দো।"
- "একটু শুনে যান, ডক্টর। কথা আছে।"
সেরেছে। আবার কী করলাম? ঢুকলাম ওর অফিসে, বসতে বলল। বাইরে আকাশে যত না মেঘ তার মুখে আরো বেশি।
- "ইয়েস, দীপালি?"
দীপালি শর্ট স্কার্ট-এর নীচে কালো লেগিংস পরা পা দুটো ক্রস করে, চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। চেয়ারটা যেন কৃতজ্ঞতাতেই হেলে গেল একটু। চোখ সরু করে তাকিয়ে রইল কুড়ি সেকেন্ড, আর আমার মনে পড়ে গেল সকালে অনুর চোখ। হঠাৎ একটু শীত-শীত করতে লাগল।
- "ই-ইয়েস, দীপালি?" আমার সত্যি ঠান্ডা লাগছে।
- "একটু আগে মি. স্রীনিবাসন কল করেছিলেন, " দীপালির গলা শীতকালের ল্যাম্পপোষ্টের মতো ঠান্ডা আর শক্ত - "আপনি গত মাসে প্রোগ্রেস আপডেট দেন নি কেন?"
ওহ্ শিট। "তুমি তো জানো দীপালি, গত মাসে কোন প্রোগ্রেসই হয় নি বলার মত। কী রিপোর্ট দেব? আর হিউমান টেস্টিং না হলে তো আর এগোনোর মানেই হয় না। আফটার অল," আমি একটু দাঁতগুলো বার করার চেষ্টা করলাম, "খরগোশের সেক্সুয়ালিটি নিয়ে তো আমাদের টেনশন নেই, কোনো হেল্প ছাড়াই ওরা ঘর ভর্তি..."
- "রিগার্ডলেস, ডক্টর," - মাখনে ছুরি পড়ার মত দীপালির কথা পড়ল আমার কথার ওপর - "রুটিন রিপোর্টস আর মাস্ট! যদি প্রোগ্রেস কিছু না থাকে, তবে তাই লিখবেন। আপনার মত সিনিয়রকে এটা বলে দিতে হবে?"
ওগো আমি সিনিয়র নই গো, আমার বয়েস মোটে পঁয়ত্রিশ! কিন্তু বোবার শ্ত্রু নেই (যদি না বোবার পদবী হয় ফেট!), তাই চুপচাপ বসে থাকলাম।
- "অল রাইট, ডক্টর। আপনি আজ লাঞ্চের আগেই রিপোর্ট তৈরী করে মেল করে দেবেন, উইথ অ্যান অ্যাপলজি লেটার। ইউ সী, এ প্রোজেক্ট অলরেডি খারাপ অবস্থায় চলছে। তার ওপর ইনডিসিপ্লিনড হলে কতদিন টিকবে মনে হয়? আপনি জানেন, বেল্লিসীমার সাথে আপার লেভেলে কথাবার্তা চলছে?"
- "বেল্লিসীমা, মানে প্রফেসর জেনিংস, দ্য নোবেল লরিয়েট-এর ফার্ম? যারা ক্যাভরডিন করেছে? মাই গড!"
- "এগজ্যাক্টলি। আর স্রীনিবাসন জেনিংস-এর ক্লাসমেট ছিল হার্ভার্ড-এ। আর কিছু বলতে হবে?"
আমি খানিকক্ষন থুম মেরে বসে রইলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছিল।
- "গেট দিস, ড. গুপ্ত। আমাদের হাতে মাসখানেকের বেশি সময় নেই, কারণ পুজোয় জেনিংস অ্যান্ড ফ্যামিলি কলকাতায় আসছে, কলকাতার 'ফেমাস পুজোস' দেখতে। ইস ইট এ কোইন্সিডেনস যে শ্রীনিবাসনও ঠিক তখনই কলকাতায় আসছে? এর আগে কিছু করে না দেখা পারলে এই প্রোজেক্ট কাপুত, ধরেই নিন। আর, অ্যাস এ রেসাল্ট, আপনার ভবিষ্যত অন্ধকার। এবং শুধু আপনি নন, থিংক অ্যাবাউট দ্য আদারস! আপনার জুনিয়ররা, আমি, অন্যান্য স্টাফ - কি হবে আমাদের সকলের? ইউ কান্ট সাইডস্টেপ ইয়োর রেসপনসিবিলিটি লাইক দিস!"
বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে দিয়ে ল্যাবে পালিয়ে এলাম। আঃ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, কেমিক্যালের গন্ধ, বিভিন্ন ছোটবড় মেশিনের কমবেশি টুকটাক ঝিমঝিম শব্দ কানে যেন মধুর সংগীত! এই আমার জায়গা, এই আমার দেশ, এই আমার ঘর!
আর একমাসের মধ্যে এ সবই ওরা নিয়ে নেবে?
------------------------------------------------------------------------------------