পাপ কাম ভালোবাসা_Written By pinuram [সপ্তবিংশ পর্ব (চ্যাপ্টার ০১ - চ্যাপ্টার ০২)]
পাপ কাম ভালোবাসা
Written By pinuram
পর্ব ২৭ (#০১)
উটি থেকে ফেরার পরে দেবায়ন বসে ছিল না, নিবেদিতাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন হোটেলের জায়গা গুলোতে কাজের জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। সাতদিন এদিক ওদিক ঘুরে কাজ সেরে এই গতকাল বাড়িতে ফিরেছে। প্লেন থেকে নেমে সোজা পন্ডিতিয়া, অনুপমার বাড়িতে।
কান পেতে শুনলে বাইরে ইলশেগুঁড়ির শব্দ শোনা যায়। ইসসস এই ভোরে উঠতে কারুর ভালো লাগে নাকি? তাও আবার প্রেমিকের কোল ছেড়ে? চাদরের তলায় আস্টেপিস্টে ওকে জড়িয়ে ধরে দেবায়ন ঘুমিয়ে। ঘাড়ের ওপরে তপ্ত শ্বাস গতরাতের কথা মনে করিয়ে দেয়। চাদরের তলায় দুইজনেই নগ্ন। নরম পাছার মসৃণ ত্বকের ওপরে দেবায়নের উত্তপ্ত লিঙ্গের ছোঁয়ায় শরীরে শিহরণ দেখা দেয়। গত রাতের পাগলামির ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ওর হাত খানি গালের কাছে টেনে চুমু খায়। রাতের খাবার পরেই গেস্টরুমে ঢুকে পড়েছিল দুইজনে।
মা মজা করে ওর কানে ফিসফিস করে বলেছিল, "দেখিস হ্যান্ডসাম যেন খাট না ভেঙ্গে ফেলে?"
অনুপমা, মায়ের কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলেছিল, "হ্যাঁ, তোমার গালের রঙ দেখে বুঝতে পারছি বেশ।"
মেয়ের মুখে ওই কথা শুনে লজ্জায় পড়ে গেছিল পারমিতা। এক বছরের ওপরে হয়ে গেছে, শুধু মাত্র স্বামী সোমেশ ছাড়া আর কারুর সাথে যৌন সঙ্গম করেনি আর হবু জামাই দেবায়নের সঙ্গে নয়। মেয়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ভালোবাসার খেলা খেলতে একটুর জন্য যে মন চায়নি সেটা নয়, কিন্তু মেয়ের মুখ দেখে আর সেই পথে পা বাড়ায়নি।
গতরাতে খাওয়ার টেবিলে বসে সেই প্রথম দিনের মতন অনুপমার পায়ের ওপরে পা রেখে দেবায়ন সুরসুরি দিয়েছিল। ভাগ্যিস এইবারে আর ভুল করে পারমিতার ঢিলে প্যান্টে পা দেয়নি অথবা সোজা যোনির মধ্যে আক্রমন করেনি। ভুলের এইবারে কোন জায়গা ছিল না, কারন পারমিতা একটা ঢিলে প্যান্ট পরেছিল, আর অনুপমা একটা ছোট স্কার্ট পরেছিল। পায়ের পাতাতে পা রাখতেই দেবায়ন বুঝে গিয়েছিল কার পায়ের ওপরে এইবারে সুরসুরি দিচ্ছে। পাশে অঙ্কন বসেছিল তাই বিশেষ কিছু করতে পারেনি। তাও ওই বদমাশ ছেলেটা হাঁটু পর্যন্ত নখের আঁচড় কেটে বারেবারে ওকে উত্যক্ত করে তুলেছিল গত রাতে। আর রাতের কথা? বাথরুম থেকে শুরু আর বিছানায় শেষ, উদ্দাম পাগল হয়েছিল দুইজনে। উটির এক সপ্তাহ পরে দেবায়নকে কাছে পেয়ে তৃষ্ণার্ত চাতকের মতন হাঁ করে চেয়েছিল প্রেমের বারিধারা। যা দিয়েছে তাই হৃদয় ভরে গ্রহন করেছে।
কোনোরকমে দেবায়নের বাহুপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠে পড়ে অনুপমা। ওর চুলে বিলি কেটে খোঁচা দাড়ি ভর্তি গালের ওপরে চুমু খায়। এতক্ষণে পায়েল অঙ্কন নিশ্চয় উঠে গেছে। অঙ্কন সকাল সকাল বেড়িয়ে যায় কলেজে তাই পায়েল সকাল সকাল উঠে পরে। অবশ্য বাড়ির বাকিরাও উঠে পড়ে। তবে সেদিন অনুপমার উঠতে দেরি হয়ে যায়, আর তার কারন স্বরূপ আরো একবার চুমু খায় দেবায়নের গালে। চাদর উঠিয়ে একবার ওর নেতিয়ে পড়া অস্ত্রটা দেখে নেয়। ইসসস, এইটা দিয়েই ঘায়েল করেছিল ওকে।
গালে হাত বুলিয়ে ওকে ডাকে, "উঠে পড়, অফিস আছে।"
ঘুমঘুম চোখ খুলেই ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের ওপরে ফেলে দেয় দেবায়ন। চুলের মধ্যে নাক মুখ গুঁজে আদুরে গলায় বলে, "আর একটু শুতে দে না প্লিস। এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাবো?"
ওর নাকের ওপরে নিজের নাক ঘষে মিষ্টি করে বলে, "অফিসে যেতে হবে না? গত রাতে বাড়ি যাসনি, মামনি এইবারে প্যাঁদাবে!"
দেবায়ন ওর মাথার পেছনে হাত রেখে মাথাটা নিজের ওপরে টেনে ধরে। ঠোঁটের ওপরে আলতো চুমু দেয়। অনুপমার চোখ বুজে আসে, সকাল সকাল এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলে কি কারুর আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে? আলতো আলতো চুমু খেয়ে বহু কষ্টে ঠোঁট ছেড়ে বলে, "দাঁত মেজে স্নান সেরে ফেল।"
গেস্ট রুম ছেড়ে বাইরে বের হতেই মায়ের মুখোমুখি। পারমিতা মেয়েকে মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, "কি রে হ্যান্ডসাম এখন পর্যন্ত ওঠেনি?" ওর টোপা দুই গালে চিমটি কেটে আদর করে বলে, "উফফফ কি ভাগ্য, নীচে মেয়ে জামাই আর ওপরে ছেলে বৌমা। কি যে করি আমি....." বলেই হেসে ফেলে।
অনুপমা ভুরু নাচিয়ে মিচকি হেসে মাকে বলে, "কেন গো, তোমার খুব হিংসে হচ্ছে নাকি আমাকে? যাও না, ভেতরে যাও, তোমার হ্যান্ডসামকে ঘুম থেকে তুলে দাও।" মাকে জড়িয়ে কানেকানে ইয়ার্কি মেরে বলে, "সকালের দিকে কিন্তু বেশি ভালো লাগে বুঝলে।" বলেই মায়ের নধর গোল নরম পাছা জোড়া একটু চেপে ধরে।
পারমিতা সকাল সকাল মেয়ের মুখে কামুক ভাষা শুনে কিঞ্চিত উত্তেজিত হয়ে যায়।
ঠিক সেই সময়ে ওর বাবা ওপর থেকে স্নান সেরে নীচে নেমে এসে দেখে মা মেয়েতে কোলাকুলি করছে। হেসে মেয়েকে আর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে, "এমন কি আলোচনা চলছে!"
পারমিতা স্বামীকে হেসে বলে, "মা মেয়ের কথা, এতে বাইরের কারুর আসার দরকার নেই।"
সত্যি এক ধাক্কায় ওদের জীবন অনেক পালটে গেছে। আর যে পালটে দিয়েছে সে এখন গেস্ট রুমে চাদরের তলায় উলঙ্গ হয়ে শুয়ে।
অনুপমা উপরে নিজের ঘরে চলে যায়। পায়েল স্নান সেরে তৈরি, ভাইয়ের জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে নীচে নেমে দেখে দেবায়ন উঠে গেছে। স্নান সারেনি, এখন চোখ ঘুম ঘুম ভাব লেগে। বাবার সাথে বসে কি সব ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এত সকালে ওই আলোচনা শুনে বিরক্তবোধ করে অনুপমা।
দেবায়ন আর বাবার ওপরে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, "সকাল সকাল অন্য কিছুর আলোচনা হতে পারে কি? আর তুই এখন স্নান করিস নি কেন?"
সোমেশ মাথা নাড়িয়ে আক্ষেপের সুরে দেবায়নকে বলে, "যাও তৈরি হয়ে নাও।"
দেবায়ন গেস্ট রুমে ঢুকে যায়, তৈরি হওয়ার জন্য।
খাবার টেবিলে বসে সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, "একবার তোর অ্যাকাউন্টেন্ট কে বলিস ব্যালেন্স শিটটা নিয়ে দুপুরের পরে আমার কেবিনে আসতে।"
অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করে, "কেন কি হয়েছে?"
সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, "কত ব্যালেন্স পড়ে আছে?"
অনুপমা খানিক চিন্তা করে উত্তর দেয়, "সাড়ে চার কোটির মতন। এই পুজোর পরে কয়েকটা প্রোজেক্ট ডেলিভার হয়ে যাবে তখন কিছু টাকা আসবে।"
সোমেশ ওকে জিজ্ঞেস করে, "ইউরোপের জন্য ছেলে খুঁজেছিস?"
অনুপমা মাথা নাড়ায়, "না।"
সোমেশ মেয়েকে মৃদু বকুনি দেয়, "করিস কি?"
অনুপমা মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, "আমি কি জানি, কি লাগবে না লাগবে। এখুনি তো দেবায়নের সাথে আলোচনা করছিলে, ওকেই বল না।"
সোমেশ মেয়ের রাগ দেখে হেসে ফেলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ ওকে বলে দিয়েছি, আজকে অফিসে গিয়ে দীপঙ্করের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করবে। আর হ্যাঁ, শ্রেয়ার কথা কিছু ভাবলি?"
অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "মানে? ওর কি হল? ওকি তোমার কাছে এসেছিল?"
সোমেশ হেসে বলে, "না রে, ও কেন আমার কাছে আসতে যাবে। আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম এই আর কি।"
মাথা নাড়ায় অনুপমা, শ্রেয়ার কথা একদম যে মনে ছিল না সেটা নয়। তবে উটি থেকে ফেরার পরে দেবায়ন আবার বেরিয়ে গিয়েছিল তাই আর সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। উটি থেকে ফিরে শ্রেয়া নিত্যদিনের মতন অফিস করে গেছে, নিজের শেয়ার অথবা মাইনে নিয়ে কিছুই উচ্চবাচ্য করেনি। একবার ভেবেছিল শ্রেয়াকে ডেকে ওর শেয়ার ফিরিয়ে দেয়, তারপরে মনে হয়েছিল যার জন্য পায়েল কে ডাইরেক্টর বানানো হয়েছিল সেটার আর দরকার নেই। পায়েলের শেয়ার শ্রেয়াকে দিলে কেমন হয়। কিন্তু এইসব নিয়ে দেবায়নের সাথে কোন কথাবার্তা হয়নি ওর।
ওদের একটু দেরি হয়ে যায় অফিসের দিকে যাত্রা করতে। বাড়িতেই সাড়ে ন'টা বাজে। দেরি দেবায়নের জন্য হয়েছিল, ছেলেটাকে তাড়াতাড়ি স্নান সারতে বলল, কিন্তু বাথরুমে ঢুকে আর বের হয় না। শেষ পর্যন্ত অনুপমা গেস্ট রুমের বাথরুমে ঢুকে পড়ে দেখার জন্য আর সেটাই কাল হল। সকাল সকাল বাথরুমের দরজা বন্ধ না করেই উলঙ্গ হয়ে সাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল দেবায়ন। অনুমাকে দেখে আর থাকতে পারেনি, ওর মুখ চেপে, বেসিনের ওপরে ঝুঁকিয়ে দিয়ে পেছন থেকে ওর স্কার্ট টেনে নামিয়ে দেয়। কচলাকচলির ফলে ওর যোনি শিক্ত হয়ে ওঠে আর সঙ্গে সঙ্গে দেবায়ন ওর টপের ওপর দিয়ে দুই স্তন মুঠি করে ধরে এক ধাক্কায় পেছন থেকে লিঙ্গ ঢুকিয়ে দেয় যোনির মধ্যে। একটু দুরেই সবাই বসার ঘরে বসে, ধরা পরে যাওয়ার উত্তেজনায় দুইজনের কামোত্তেজনা চরমে উঠে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে দেবায়নের গলা জড়িয়ে পাছা উঁচু করে কঠিন লিঙ্গের সঞ্চালন নিজের শিক্ত পিচ্ছিল যোনির মধ্যে উপভোগ করতে করতে রাগমোচন করে। ইসসস কি যে করে না ছেলেটা। সারা অঙ্গে কামকেলির তীব্র সুখের ছটা মাখিয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে অনুপমা। গেস্ট রুমে ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে নিজের জামা কাপড়, চুল চেহারা ঠিক করে নেয়। বাইরে বেড়িয়ে দৌড়ে নিজের ঘরে, ঠোঁটের লিপস্টিক দেবায়নের পেটে, গালের লালিমা বেশ ভালোই লাগছে।
ব্রেকফাস্ট সেরে তিনজনে অফিসের জন্য বেড়িয়ে পড়ে। গাড়িতে বসে কিছুতেই আর অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারে না, ওইদিকে দেবায়ন বেশ নিরুত্তাপ। সেই দেখে আরো রেগে যায় অনুপমা। একবার ভাবে অশান্ত মনকে সান্ত করার জন্য শ্রেয়ার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করবে। কিন্তু পাশে পায়েল, যদি পায়েল ভেবে বসে ওকে খর্ব করা হচ্ছে তাই আর শ্রেয়া সংক্রান্ত কোন আলোচনা করে না। এই কয়দিনে দেবায়ন আর নিবেদিতা যেখানে ঘুরে বেড়িয়েছে সেই নিয়ে ওদের গল্প চলে। উটি থেকে ব্যাঙ্গালোর হয়ে বিন্সার, ডালহৌসি, সোলাং ভ্যালি সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছে, কাজে না অন্য কিছু? দেবায়নকে বারেবারে খেপিয়ে তোলে অনুপমা।
দেবায়ন হেসে মাথা দুলিয়ে ওকে আরো উত্যক্ত করে জবাব দেয়, "উফফফ নিবেদিতা, মাইরি মারাত্মক মাল। বিন্সারে রুম খালি ছিল না তাই একটা রুমেই রাত কাটাতে হয়েছে।"
অনুপমা ওই কথা শুনে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে, "মানে? গতকাল রাত্রে এইসব বলিসনি ত?" বলেই ওর চুলের মুঠি ধরে আদর করে মারতে শুরু করে দেয়।
দেবায়ন হেসে পেছনে বসা পায়েলকে বলে, "দ্যাখ দ্যাখ, আমি কিছু করিনি তাই এত মার খেতে হচ্ছে। দেখিস ভাইকে, কোথাও কোন মেয়েকে দেখলে যেন এই ভাবে মারিস না।"
পায়েল চুপচাপ মিচকি হেসে উত্তর দেয়, "অঙ্কন ওইসব করে না।"
অনুপমা পায়েলের গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "বাপ রে এত বিশ্বাস? সব ছেলে এক বুঝলি, প্যান্টের মধ্যে একটা....." সামনে ড্রাইভার বসে তাই আর কথাটা শেষ করল না।
অফিসে ঢুকে দেখে ইতিমধ্যে শ্রেয়া এসে গেছে, রূপক খোঁড়াতে খোঁড়াতে একবার ডেভেলপার দিকে একবার অপারেশান টিমের দিকে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। সুপর্ণা ম্যাডাম মাথায় হাত দিয়ে বসে, অপারেশান টিমের সবাই রুপকের হুঙ্কারে কাঁপছে। এই অবস্থা দেখে কি ঘটেছে জানার জন্য অনুপমা আর দেবায়ন এগিয়ে যায়।
জিজ্ঞেস করাতে রূপক জানায়, "আরে আমাদের সার্ভার হ্যাক হয়েছে। জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট আর ডেটা উড়ে গেছে।"
অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। দেবায়ন প্রশ্ন করে, "ব্যাকআপ ছিল না?"
রূপক উত্তর দেয়, "ব্যাক আপ ছিল, রিস্টোর করতে একদিন লাগবে। সেটা চিন্তার কথা নয়, চিন্তার কথা হচ্ছে ফায়ারওয়াল থাকা সত্ত্বেও কি করে হ্যাক হয়।" মাথা চুলকে বলে, "শালা বড় ঘাঘু মাল যে করেছে, চেক রিপাবলিকের আই পি এড্রেস, শালা ধরা মুশকিল।"
শ্রেয়া দাঁতে দাঁত পিষে বলে, "শালা আমি জানি কে করেছে। একবার হাতে পেলে মেরে ফেলবো। এটা নির্ঘাত ইন্দ্রনীলের কাজ।"
অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "ইন্দ্রনীল? ও তো মার্কেটিংয়ের লোক, এই নেটওয়ার্ক সম্বন্ধে এত সব জানবে কি করে?"
শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে বলে, "না না আমার মন বলছে এটা নির্ঘাত ইন্দ্রনীলের কাজ। ইউরোপে ওর অনেক বন্ধু বান্ধব আছে, তাদের কাউকে দিয়ে অতি সহজে এই কাজ করানো যেতে পারে।"
দেবায়ন রূপককে শান্ত করে বলে, "আচ্ছা ঠিক আছে রে বাবা। একদিন সময় লাগবে তো, ঠিক আছে। তুই ওই রিস্টোর করা শুরু করে দে।"
তারপরে দেবায়ন চলে যায়। অনুপমা আর শ্রেয়া নিজের কাজে ডুবে যায়। একটু পরে অনুপমা, দেবায়নের কেবিনে ঢুকে শ্রেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। দেবায়নের মত আছে, তবে এখুনি পায়েল কে ডাইরেক্টর পদ থেকে সরালে হয়ত পায়েল আহত হবে তাই কে বলে নিজেদের থেকে পাঁচ পারসেন্ট শেয়ার শ্রেয়াকে দিয়ে দিতে। অনুপমা খুব খুশি হয়ে শ্রেয়াকে কেবিনে ডাকে।
শ্রেয়া কেবিনে ঢুকতেই দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, "উম্মম সুন্দরী কেমন আছিস? সকাল সকাল মাথা গরম?"
শ্রেয়া রাগে গজগজ করতে করতে বলে, "মাদার চোদ ইন্দ্রনীল, হাতের কাছে পেলে ওকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেব।"
অনুপমা হেসে বলে, "আচ্ছা থাক সেই কথা। কিছু আলোচনা করার আছে তোর সাথে একটু বস।"
শ্রেয়া একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, "কি বিষয়ে?"
অনুপমা ওর হাত দুইখানি নিজের হাতের মধ্যে ধরে বলে, "তুই ওই রেজিগনেশানের ব্যাপারে কিছু বললি না তো আর?"
শ্রেয়া ম্লান হেসে উত্তর দেয়, "সেটা তোর ব্যাপার, আমার কাজ কাজ করা সেটাই করে যাচ্ছি আর কিছু চাই না।"
দেবায়ন ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, "সকাল সকাল গীতা পড়েছিস নাকি রে?"
শ্রেয়া মিচকি হেসে বলে, "নারে গীতা নামে আমাদের কোন বান্ধবী নেই যার শরীর আমি পড়ব।"
অনুপমা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, "এই আমি মজা করছি না কিন্তু। আমরা একটা চিন্তা ভাবনা করেছি।" শ্রেয়ার চোখে হাজার প্রশ্ন, তার উত্তরে অনুপমা ওকে বলে, "আমরা ভেবেছি তোর শেয়ার বাড়িয়ে সতেরো করে দেব।"
শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে হাত টেনে প্রশ্ন করে, "হঠাৎ এক লাফে সতেরো, কি ব্যাপার?"
দেবায়ন তার উত্তরে বলে, "না মানে রূপক একবার বলেছিল অনুকে তাই।"
ওই কথা শুনে শ্রেয়া বড় আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে, "কি বলেছিল কবে বলেছিল?"
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, "ওই জলপাইগুড়িতে রূপক আমাকে বলেছিল বারো পারসেন্ট থেকে বাড়িয়ে দিতে। তাই আমরা ভেবেছি যে পায়েলের শেয়ার তোকে দিয়ে দেব।"
শ্রেয়া একটু আশ্চর্য চকিত হয়ে প্রশ্ন করে, "সত্যি রূপক বলেছিল? আচ্ছা, দেখি ওর সাথে কথা বলে।"
একটু থেমে চিন্তিত কণ্ঠে বলে, "পায়েলের পাঁচ পারসেন্ট আমার কেন? ওকে সরিয়ে দিলে মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারে। আর হ্যাঁ, আমি শেয়ার চাই না আর ডাইরেক্টর হতে চাই না। শুধু ডিজাইনার আছি ভালো আছি।"
অনুপমা অভিমানী কণ্ঠে বলে, "এত রাগ আমাদের ওপরে?"
শ্রেয়ার চোখ জোড়া ছলকে ওঠে, "না রে, রাগ অভিমান কিছু নয়, এই এমনি বেশ ভালো আছি। বন্ধুত্বের মধ্যে টাকা পয়সা এসে গেলে সম্পর্কের টান কমে যায়, ওটা পারলে রুপকের নামে করে দিস না হলে থাক।"
দেবায়ন শ্রেয়ার গাল টেনে বলে, "না রুপকের নামে হবে না। তোর ছিল তোর থাকবে। তুই ভেবে নিস তোকে কিছু দেওয়া হয়নি ব্যাস তাহলে আর কোন চিন্তা থাকবে না।"
শ্রেয়া টলটল চোখে অনুপমাকে বলে, "তোরা দুটো না একদম পাগল।"
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, "আর তুইও, পাগলে পাগল চেনে....."
দেবায়ন দুইজন কে জড়িয়ে ধরে বাক্যটা শেষ করে বলে, "আমি চিনি গুদু....."
পর্ব ২৭ (#০২)
শেয়ার নিয়ে শ্রেয়া নির্বিকার, টাকার অঙ্ক বাড়ল কি কমল সেটা নিয়ে ওর বিশেষ মাথাব্যাথা নেই। আগের মতন কাজে ডুবে যায় কিন্তু হাতে বেশি টাকা পেয়ে রূপক বেশ খুশি। কে বা কারা ওদের সার্ভার হ্যাক করেছিল সেটা আর ধরা যায় না তবে কাজের বিশেষ ক্ষতি হয়নি, কারন ডেটা আর প্রোগ্রামের ব্যাকআপ ছিল, একদিনের মধ্যে ডেটা রিস্টোর করে কাজ শুরু হয়ে যায়।
কয়েকদিন পরেই ওদের গ্রুপ কোম্পানির অ্যানুয়াল মিটিং, হোটেলের মালিকদের আর ম্যানেজারদের ডাকা হয়েছে, দুটো কন্সট্রাকশান কোম্পানির কর্মচারীদের ডাকা হয়েছে সেই সাথে অনুপমাদের সফটওয়্যার কোম্পানির সবাইকে ডাকা হয়েছে। নিবেদিতা আর অনুপমার ওপরে অ্যানুয়াল মিটের সব ভার তাতেই ওরা দুইজনে খুব ব্যাস্ত। মিস্টার হেরজোগ আর মিস্টার মেরকেল, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স আর এয়ার বার্লিনের আই টি ডিপার্টমেন্টের কর্তারা আসবে বলে জানিয়েছে।
দেবায়ন, মিটের জায়গা ঠিক করার জন্য বাবার সাথে হোটেল র্যাডিসন গেছে। ওই হোটেলে বেশ বড় লন আছে, সেই সাথে গঙ্গার ধারে তে বেশ ভালো হবে। অনুপমা চুপচাপ নিজের কেবিনে বসে অ্যানুয়াল মিটের কথা চিন্তা করছিল। কি মেনু হবে, কারা কারা আসছে তাদের ফাইনাল লিস্ট, বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের কারুর কারুর জন্য র্যাডিসনে রুম বুক করা হয়েছে, কারুর জন্য পার্কে অথবা হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে সেটা খেয়াল নেই ওর। এমন সময়ে শ্রেয়া আর পায়েল দড়াম করে ওর দরজা খুলে কেবিনে ঢুকে পরে। ওদের ওই ভাবে ঢুকতে দেখ একটু আশ্চর্য হয়ে যায় অনুপমা।
শ্রেয়া সামনের চেয়ার টেনে বলে, "এই তুই কি রে, লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে আর এত কি নিয়ে পড়ে আছিস তুই?" পায়েল চুপচাপ শ্রেয়ার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে সামনে বসে পড়ে।
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, "কি এনেছিস আজকে?"
শ্রেয়া ওর ল্যাপটপ বন্ধ করে বলে, "দেবু নেই বলে কি খাওয়া দাওয়া ভুলে গেছিস?"
অনুপমা হেসে উত্তর দেয়, "না না সেরকম কিছু নয়। এই অ্যানুয়াল মিটের ব্যাবস্থা করছিলাম। নিবেদিতা ম্যাডামের সাথে এর পরে দেখা করতে যাবো।"
শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "ওই সব জানিনা, সামনে পুজো, পুজোর বাজারের কি হবে?" পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে, "কিরে, আমি কি সব বলব আর তুই বেশ আম খাবি তাই না?"
পায়েল স্মিত হেসে ওকে বলে, "তুই যে ভাবে আক্রমন করেছিস তাতে আমি আর কি বলব।" তারপরে অনুপমাকে বলে, "রূপক এইবারে ধরেছে ট্রেকিংয়ে যেতে। কি করব?"
উফ, এই রূপক, কয়েকদিন থেকে নেচে বেড়াচ্ছে ট্রেকিংয়ে যাবে। কে কে যাবে এখন সেটাই ঠিক করা হল না, কে না কে ওকে ইমেল করেছে আর সেই নিয়ে খাটলিং গ্লেসিয়ার যাবে তাই নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু করে দিয়েছে।
শ্রেয়া ওর হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলে, "আজকে আর কোন কাজ নয়, চল পুজোর বাজার করতে বেরিয়ে পড়ি।"
অনুপমা পায়েলের দিকে তাকায়, পায়েল স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় যে পুজোর বাজার করতে যেতে রাজি। অনুপমা জানায় ওকে একবার নিবেদিতার কাছে যেতে হবে কিছু বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। পায়েল, শ্রেয়া কেউ নিবেদিতাকে চেনে না তাই ওকে প্রশ্ন করে নিবেদিতার পরিচয়। অনুপমা একটু ভেবে নিবেদিতার পরিচয় দেয়, ওদের কন্সট্রাকশান কোম্পানির কর্ণধার হিসাবে।
তিনজনে রাসেল স্ট্রিটের অফিস থেকে বেড়িয়ে সোজা মিন্টো পার্কে, নিবেদিতার অফিসে চলে যায়। ওদের দেখে নিবেদিতা একটু অবাক হয়ে যায়। কোনোদিন অনুপমা ওদের অফিসে আসেনি আর যখন এসেছে একেবারে সাথে দুই বান্ধবী নিয়ে এসেছে।
নিবেদিতা একটু ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরে অনুপমাকে দেখে। অনুপমা ওকে ক্ষান্ত করে বলে, "আরে এত হুড়োহুড়ি কেন লাগিয়েছ? সবাই বান্ধবী।" পায়েল আর শ্রেয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
নিবেদিতা হেসে পায়েলকে বলে, "কেমন আছো?"
পায়েল অবাক হয়ে যায়, অনুপমা আলতো মাথা দুলিয়ে ইশারায় জানায় নিবেদিতা ওর সম্পর্কে সব কিছু জানে। তারপরে অনুপমা ওকে জানায় যে ওরা সবাই পুজোর বাজার করতে বের হবে, যদি নিবেদিতা সঙ্গে যায় তাহলে খুব ভালো হয়। সেই শুনে নিবেদিতাও বেশ খুশি হয়ে যায়। অনুপমার মাথায় শুধু মাত্র একটা চিন্তা ঘোরাফেরা করে, সত্যি কি বিন্সারে নিবেদিতা আর দেবায়ন একটা রুমে ছিল?
অদম্য কৌতূহল শেষ পর্যন্ত দমিয়ে রাখতে না পেরে অনুপমা নিবেদিতাকে এক সময়ে কানেকানে প্রশ্ন করে, "বিন্সারে কি হয়েছিল?"
হঠাৎ ওই প্রশ্ন শুনে নিবেদিতা ঘাবড়ে যায়, উত্তর দেয়, "কি হয়েছিল?"
অনুপমা ওর চেহারা দেখে বুঝতে পারে দেবায়ন ওকে ইয়ার্কি মেরে বলেছে, তাও প্রশ্ন করে, "রিসোর্ট কেমন ছিল?"
নিবেদিতা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ ঠিকঠাক, তবে অনেক কাজ বাকি। একটা সুইমং পুল, একটা বাচ্চাদের পার্ক, বেশ কিছু এক্সপান্সানের কাজ করতে হবে এই যা। কেন দেবায়ন তোমাকে কিছু বলেনি এই ব্যাপারে?"
অনুপমা মাথা নাড়ায়, "না গো, এই সবে আমার কি কাজ। আজকাল কোথায় কি কি করে আসে আমাকে সব বলে নাকি?"
নিবেদিতা হেসে বলে, "এই রকম বল না, সারাটা সপ্তাহ শুধু তোমার গুণগান করে বেড়িয়েছে।" ওর গাল টিপে বলে, "এক সময়ে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেছিল পুচ্চির কথা শুনে।"
"পুচ্চি" এই ডাক শুধু মাত্র দেবায়ন আর ওর মধ্যে সীমিত। সেই নাম নিবেদিতার ঠোঁটে শুনে বুঝতে পারে, না সারাটা সময় শুধু মাত্র ওর কথাই হয়েছে এদের মাঝে।
মিন্টো পার্কের নিবেদিতার অফিস থেকে চারজনে বেড়িয়ে, গাড়ি নিয়ে সোজা, এস্প্লানেড। আকাশে কালো মেঘ তাও বাঙ্গালীরা পুজোর বাজার করতে বেড়িয়েছে, পুজো বলে কথা, সামান্য কালো মেঘ কি আর তাতে বাধ সাধতে পারে। রাস্তায় তিল ঠাইয়ের জায়গা নেই, চারদিকে লোকে লোকারণ্য। কোন ছেলে সঙ্গে নেই, ভিড় ঠেলে এগুতে একটু অসুবিধে হয়, এত ভিড়ে কেনাকাটা করতে অনুপমা অভ্যস্ত নয়। এতদিন দেবায়ন অথবা মায়ের সাথে বেড়িয়েছে, ওকে আগলে রাখার জন্য পাশে দেবায়ন থাকত এইবারে নেই। ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে এমন সময়ে ওর মামনি, দেবশ্রীর ফোন আসে।
দেবশ্রী ফোন করে বলে, "হ্যাঁ রে তুই কোথায়?"
অনুপমা উত্তর দেয়, "এই শ্রেয়া আর পায়েলকে নিয়ে একটু শপিং করতে বেড়িয়েছি। কি হয়েছে বল না?"
দেবশ্রী একটু থেমে ওকে প্রশ্ন করে, "দেবু কখন বাড়ি ফিরবে কিছু বলে গেছে কি?"
অনুপমা জানে দেবায়নের ফিরতে রাত হবে, রেডিসন থেকে সোজা আবার ব্যান্ডেল যাবে বাবার সাথে তারপরে ফিরবে। তাই দেবশ্রীকে উত্তর দেয়, "ওর ফিরতে রাত হবে কেন কিছু কাজ আছে নাকি?"
দেবশ্রীর একটু চিন্তিত কণ্ঠে ওকে বলে, "এখুনি একটু বাড়িতে আসতে পারবি? একটু কথা ছিল।"
বন্ধুদের নিয়ে শপিং করতে বেড়িয়েছে এরমাঝে মামনির ফোন। মামনির গলা শুনে মনে হল একটু চিন্তিত তাই পাল্টা প্রশ্ন করে, "কি হয়েছে তোমার?"
দেবশ্রী উত্তর দেয়, "তেমন কিছু না। মণির ছেলে হয়েছে....."
সেই খবর শুনে অনুপমা আনন্দিত হয়ে বলে, "এত ভালো খবর কিন্তু তোমাকে কে খবর দিল?"
দেবশ্রী একটু থেমে ওকে বলে, "না রে ওরা এখানে মানে..... তুই একটু বাড়িতে আসতে পারবি, জরুরি দরকার আছে।"
সূর্য মনিদিপা কোলকাতায় শুনে অনুপমা আশ্চর্য হয়ে যায়। ওদের জলপাইগুড়ি থাকার কথা, সেই মতন দেবায়নকে রাজি করিয়ে ওদের ছয় লাখ টাকা দিয়ে এসেছিল দোকান করার জন্য। মনিদিপা ছেলে হয়েছে সেটা সুখবর বটে কিন্তু ওদের বারবার করে বলে এসেছিল যাতে ওরা কোনোদিন মামনির সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা না করে তা স্বত্তেও ওরা ফোন করেছে? ভাবতেই রাগে অনুপমার গা জ্বলে ওঠে।
অনুপমা মামনিকে প্রশ্ন করে, "কোথায় আছে ওরা, কি কথা হয়েছে ওদের সাথে?"
দেবশ্রী ওর কণ্ঠস্বর শুনে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলে, "তুই প্লিস দেবুকে কিছু বলিস না পারলে একটু তাড়াতাড়ি মানে দেবু বাড়ি ফিরে আসার আগে আমার এখানে আয়।"
তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমতী অনুপমার বুঝতে দেরি হয় না যে মনিদিপা আর সূর্য সোজা মামনির বাড়িতে এসেছে। শ্রেয়া আর পায়েলকে বলে অফিসে চলে যেতে আর নিবেদিতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। বলে একটা জরুরি কাজে ওকে এখুনি বের হতে হবে। শ্রেয়া বারেবারে জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেয় না। নিবেদিতা বাকিদের নিয়ে বেড়িয়ে পরে অফিসে দিকে আর অনুপমা একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা লেক টাউনে দেবায়নের বাড়ি পৌঁছে যায়।
দেবশ্রী ওর জন্য বসার ঘরে অপেক্ষা করছিল। বাড়িতে ঢুকেই মনিদিপা আর সূর্যকে দেখে আশ্চর্যের সাথে সাথে রেগে ওঠে। দেবশ্রী অনুপমার চেহারা দেখে বুঝতে পারে যে অনুপমা রেগে গেছে ওদের দেখে, কিন্তু নিরুপায়।
অনুপমা কঠিন কণ্ঠে সূর্য আর মনিদিপাকে প্রশ্ন করে, "কি মনে করে একেবারে এই বাড়িতে আসা হয়েছে?"
সূর্য এক কোনায় দাঁড়িয়ে, মনিদিপা ছোট ছেলে কোলে ওকে বলে, "প্লিস খুব বিপদে পরে বৌদির স্মরনে এসেছি। আমি জানতাম তুমি রেগে যাবে কিন্তু আমরা বড় নিরুপায়।"
অনুপমা হিমশীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "কেন নিরুপায়? তোমাকে ছয় লাখ টাকা দিয়ে এসেছিলাম দোকান দিতে। চুপচাপ ওইখানে ব্যাবসা করতে পারতে। আবার আমাদের জীবনে কোন ব্যাঘাত ঘটাতে এসেছ? আর এসেছ যখন তখন এই বাড়িতে কেন?" সূর্যের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, "তোমার মনে নেই কি বলেছিলাম?"
ওর কঠিন কণ্ঠস্বর শুনে দেবশ্রী ওকে শান্ত করে বলে, "যা হবার হয়ে গেছে, এইবেলা ওদের ক্ষমা করে দে, মা।"
অনুপমা অবাক হয়ে মামনিকে বলে, "তুমি কি মানুষ মামনি? যা হবার হয়ে গেছে আর আমরা ভুলে যাবো?"
দেবশ্রী মাথা নিচু করে বসে থাকে সেই সাথে সূর্য আর মনিদিপার মাথা নিচু হয়ে যায়। অনুপমা ওদের কোলকাতা আসার কারন জিজ্ঞেস করে।
উত্তরে সূর্যের বদলে মনিদিপা বলে, "কিছুটা আমাদের ভুল আর আমাদের কপাল। তুমি যে ছয় লাখ টাকা দিয়েছিলে তার মধ্যে তিন লাখ দিয়ে একটা ছোট দোকান খুলেছিল সূর্য আর বাকি তিন লাখ একটা চিটফান্ডে দিয়েছিল। সেই চিট ফান্ড টাকা খেয়ে পালিয়ে গেছে। দোকানের অনেক কিছু বাকি পড়ে যায়, দোকান কয়েক মাস পরে উঠে যায়। আবার আমরা সেই পথে বসে যাই।"
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কঠিন কণ্ঠে মনিদিপাকে বলে, "সেটা তোমাদের আগে ভাবা উচিত ছিল মনিদিপা। বারেবারে তোমাদের টাকা আমি দিতে পারব না। সেবারে অনেক কষ্টে দেবায়নকে রাজি করিয়ে টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু আর নয়।" কিছুক্ষণ থেমে বলে, "এখন কোথায় উঠেছ?"
মনিদিপা মাথা নাড়িয়ে বলে, "সোজা জলপাইগুড়ি থেকে এইখানে এসেছি আর কোথায় যাবো বল?"
অনুপমা আহত সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে, "কেন, তোমাদের অসুবিধে আমাকে ফোন করতে পারোনি?"
আহত সূর্য মিনমিন করে বলে, "না মানে, ভাবলাম তুমি সেই বারে টাকা দিয়েছ এইবারে যদি বৌদি....."
মামনি সামনে বসে আছে সেটা অনুপমা ভুলে যায়, প্রচন্ড রাগে চেঁচিয়ে বলে, "মামনি কি করবে? দেবায়ন আসার আগে তোমাদের এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।"
সূর্য কাতর কণ্ঠে বলে, "কোথায় যাবো? এইখানে আর কে আছে আমাদের?"
অনুপমা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, "এতদিন এই কোলকাতায় ছিলে কোন চেনাজানা কারুর বাড়িতে থাকো কিন্তু আর এক পয়সা তোমরা পাবে না।"
অগ্নিশর্মা অনুপমাকে শান্ত করে দেবশ্রী বলে, "তুই একটু শান্ত হয়ে দেখ কি করা যেতে পারে। এই ছোট বাচ্চা নিয়ে ওরা কোথায় যাবে?"
তখনি কোলের ছোট বাচ্চাটা কেঁদে ওঠে, সেই কান্না শুনে অনুপমার মন কিছুটা গলে যায়। মনিদিপা আর সূর্যকে বলে, "তোমাদের মাথা গোঁজার জায়গা আছে কি?"
সূর্য মাথা দুলিয়ে জানায় আছে।
অনুপমা ওদের বলে, "আচ্ছা তাহলে সেইখানে থাকো। কয়েকদিনের মধ্যে আমি দেখি কি করতে পারি।"
অনুপমা মনিদিপার কোল থেকে ছোট ছেলেটাকে কোলে নিয়ে দেখে, বেশ টাবুটুবু গোলগাল মিষ্টি দেখতে বাচ্চাটা। ছোট্ট নরম হাত বাড়িয়ে অনুপমার গাল ছুঁয়ে দেয়। অনুপমা শেষ পর্যন্ত রাগ ভুলে ছেলেটাকে কোলে নিয়ে হেসে ফেলে। আলতো মাথা নাড়িয়ে স্মিত হেসে বলে, "এই তোর জন্য বুঝলি রে শয়তান ছেলে....."
বিনামেঘে বজ্রাপাতের মতন বাড়ির সামনে অনুপমার বাবার গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ওই গাড়ি থেকে দেবায়ন কে নামতে দেখে বাড়ির মধ্যে সবার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। অনুপমা আর দেবশ্রী মুখ চাওয়াচায়ি করে, কিছু করে হোক দেবায়নকে সরাতে হবে। যদি দেবায়ন ওদের বাড়িতে সূর্য আর মনিদিপাকে দেখে ফেলে তাহলে মাথায় রক্ত চড়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে অনুপমার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, নিজের ব্যাগ উঠিয়ে মামনির গালে ছোট্ট চুমু খেয়ে বেড়িয়ে যায়।
দেবায়ন বাড়িতে ঢোকার আগেই সামনের দরজা খুলে এক গাল হেসে ওকে বলে, "তুই এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি? র্যাডিসন ফোরটে কি হল?"
ওদের বাড়িতে এই বিকেলে অনুপমাকে দেখে দেবায়ন আশ্চর্য হয় না, কেননা ওর জন্য এই বাড়ির দরজা সবসময়ে খোলা। তাও স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করে, "মা কখন বাড়িতে ফিরেছে?"
অনুপমা ওকে বাইরেই দাঁড় করিয়ে রেখে বলে, "আরে না আমার একটু কাজ ছিল তাই এসেছিলাম।" ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, "তুই প্লিস আমার সাথে একটু পুজোর শপিং করতে যাবি?"
দেবায়ন অবাক হয়ে ওকে বলে, "সেই রায়চক থেকে এসেছি একটু বাড়িতে বসতে দে তারপরে না হয় যাবো।"
অনুপমা কাতর কণ্ঠে আবদার করে, "প্লিস প্লিস, ওই দেখ গাড়ি দাঁড়িয়ে আছ চল না একটু।"
সুন্দরী প্রেয়সীর কাতর কণ্ঠের ডাক উপেক্ষা করার যো ওর নেই তাই অগত্যা আবার গাড়িতে উঠে অনুপমার সাথে শপিং করতে বের হতে হয় ওকে। গাড়িতে উঠেই দেবায়নের চোখ বাঁচিয়ে দেবশ্রীকে একটা এস এম এস করে জানিয়ে দেয় সূর্য আর মনিদিপাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দিতে আর রাতে ফোন করে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলবে। ঘুণাক্ষরে যদি দেবায়ন এই বিষয়ে টের পায় তাহলে আর রক্ষে নেই।
সেদিনের মতন সূর্য আর মনিদিপাকে দেবায়নের হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয় অনুপমা। সেদিন শপিং করতে বিশেষ মন ছিল না ওর, মাথায় শুধু ঘুরছিল সূর্য আর মনিদিপাকে কি করে ওর চোখ বাঁচিয়ে সাহায্য করা যায়। ব্যাঙ্কে ওদের জয়েন্ট একাউন্ট, এতগুলো টাকা তুললে অতি সহজে দেবায়নের কাছে ধরা পড়ে যাবে, যদিও দেবায়ন কোনোদিন প্রশ্ন করে না ব্যাঙ্কের খাতা কোনোদিন নিজে খুলে দেখেও না। টাকার দরকার পড়লে ওর পার্স হাতড়ায় না হলে ওর কাছেই হাত পাতে। কিন্তু তাই বলে এত গুলো টাকা দেবায়নকে না বলে দেবে, সেটা মন মেনে নিতে পারে না। সূর্য আর মনিদিপা যখন আবার কোলকাতা ফিরে সোজা দেবায়নের বাড়িতে এসছে, নিশ্চয় কিছু কুমতলবে এসেছে। যদি সত্যি ওদের টাকার প্রয়োজন হত অথবা বিপদে পড়ত তাহলে হয়ত একবারের জন্য ওকে ফোন করত কিন্তু সেটা করেনি। কত টাকা চায় ওরা, কত টাকা দিলে সূর্য আর মনিদিপা চুপ থাকবে? একবার মনিদিপার শারীরিক অবস্থা দেখে বিগলিত হয়ে টাকা দিয়েছিল, এইবারে আবার কোলে ছোট ছেলে নিয়ে এসেছে। ফেলে দিতে চাইলেও ফেলে দেওয়া যায় না কিছুতেই। অন্তত ওর হৃদয় অতটা পাথর হয়ে যায়নি এখন। শত ভাবনা মাথায় ভর করে। দেবশ্রীও এই বিষয়ে দেবায়নকে কিছু জানায় না।
কয়েকদিন পরে সূর্যের দেওয়া ঠিকানায় অনুপমা একা গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে।