নিয়তির স্রোতস্বিনী_Written By SS_Sexy [চ্যাপ্টার ৪৮]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2017/01/written-by-sssexy_51.html

🕰️ Posted on January 30, 2017 by ✍️ SS_Sexy

📖 2511 words / 11 min read


Parent
নিয়তির স্রোতস্বিনী Written By SS_Sexy (#৪৮) অনুরাধা ডক্টর মুখার্জীর কথার জবাব দিল, "মাসিরই আসবার কথা ছিল ডক্টর। কিন্তু হঠাৎ একটা জরুরী কাজ পড়ে যেতে সে আসতে পারল না। তাই আমরাই এসেছি। তা ডক্টর, আজ তো বৃহস্পতি বার। আপনার চেম্বার তো শুনেছি রবিবারে বন্ধ থাকে। আজ তাহলে চেম্বার বন্ধ কেন?" ডক্টর মুখার্জী বললেন, "আজ একটা বিশেষ পারিবারিক কারনেই চেম্বারটা বন্ধ রাখা হয়েছে। আপনারা আসুন আমার সাথে।" ডক্টর মুখার্জির পেছনে পেছন চলতে চলতে অনুরাধা কনুই দিয়ে আমাকে খোঁচা মেরে আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, "রুমুদি, ডাক্তার তো মনে হয় ভালভাবেই আটঘাট বেঁধে রেখেছে গো। তোমাকে আজ না করে ছাড়বে না কিছুতেই দেখে নিও।" আমি ওকে ঈশারায় চুপ করতে বলে ডাক্তারের পেছন পেছন এগিয়ে চললাম। ছোট গেটটা দিয়ে ভেতর দিক দিয়ে ঢুকে মনে হল একটা বাড়ি। এটা যে একটা তিনতলা বিল্ডিং সেটা তো আগেই দেখেছিলাম। ডাক্তারের পেছন পেছন একটা রুমের সামন দিক দিয়ে আরেকটা রুমে ঢুকতেই মনে হল এটাই তার চেম্বার। ডক্টর মুখার্জি টেবিলের ও’পাশে রাখা দুটো চেয়ারের দিকে ঈশারা করে বললেন, "আপনারা এখানে বসুন প্লীজ। আমি এক মিনিটেই আসছি" বলে আবার পেছনের দরজাটা দিয়েই ভেতরে ঢুকে গেলেন। আমি আর অনুরাধা দুটো চেয়ারে পাশাপাশি বসতেই অনুরাধা ফিসফিস করে বলল, "ডক্টর মুখার্জি বোধহয় ওপর তলাতেই থাকেন। চেম্বারটা বাড়ির গ্রাউন্ডফ্লোরেই বানিয়েছেন মনে হচ্ছে।" আমিও অনুরাধার কথায় সায় দিলাম। কাঁধের ব্যাগটা কোলের ওপর রেখে বললাম, "সামনে বোর্ডে কী লেখা ছিল, খেয়াল করেছিলি অনু?" অনুরাধা আগের মতই ফিসফিস করে বলল, "হু দেখেছি। লেখা ছিল ডাক্তার বাইরে। শুক্রবারে চেম্বারে বসবেন।" আমি সে’কথা শুনে বললাম, "কিন্তু উনি তো বাড়িতেই আছেন। তাহলে এমন মিথ্যে কথা বলার মানে?" অনুরাধা জবাব দিল, "লোকটা বোধহয় নিরিবিলিতে আমাদের সাথে সময় কাটাতে চাইছে। দেখছ না? একটা ডাক্তারের চেম্বারে তো ডাক্তার বাদেও দু’একজন কর্মী বা অ্যাসিস্ট্যান্ট সব জায়গাতেই থাকে। আর ইনি তো বেশ নামকরা ডাক্তার। ঢোকবার সময় তো তিন চারটে রুম দেখে মনে হল ও’গুলোও বুঝি এই ক্লিনিকটারই অংশ। এতবড় চেম্বার আর ক্লিনিকে তো কম করেও পাঁচ ছ’জন কর্মী থাকবার কথা। কিন্তু দেখ, অন্য আর একটা লোকও তো এখানে নেই।" আমিও অনুরাধার কথায় সম্মতি না জানিয়ে পারলাম না। অনুরাধা আবার বলল, "ডাক্তার তো আমাদের রবিবারে আসতে বলেছিলেন। রবিবারে তার চেম্বার বন্ধ থাকে। কোন রুগী বা স্টাফের থাকবার কথা নয়। তাই সে একা আমাদের সাথে দেখা করতে পারতেন। কিন্তু মাসি অনুরোধ করে রবিবারের বদলে বৃহস্পতি বারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে আজও চেম্বার বন্ধ করে সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন।" এবারেও আমি অনুরাধার কথার জবাবে ছোট্ট করে একটা "হুঁ" করলাম। অনুরাধা আবার নিজে থেকেই বলল, "আমার মনে হচ্ছে লোকটা ঠিক কিছু না কিছু করবেই আমাদের সাথে। এটাই যদি তার বাড়ি হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ির লোকেরা নিশ্চয়ই তার রুগী দেখার সময় নিচে আসবে না। উনি নিশ্চিন্তে নির্ঝঞ্ঝাটে আমাদের সাথে সেক্স করতে পারবেন। তুমি মনে মনে তৈরী থেকো রুমুদি।" আমি অনুরাধার কথার কোন জবাব না দিয়ে চেম্বারটার চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো চেম্বারটা। একটা নামী ডাক্তারের চেম্বার যেমন হওয়া উচিৎ ঠিক সেভাবেই। অনুরাধার ধারণাকে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছিলাম না। তবে এ’ঘরে তো রুগীকে শুইয়ে পরীক্ষা করবার কোন বেড দেখতে পাচ্ছি না। সেটা নিশ্চয়ই আশেপাশেই কোথাও আছে। সেই বেডে শুইয়েই সবকিছু করতে পারবেন। আর সবদিক তো একেবারে নিঝুম বলে মনে হচ্ছে। কোথাও কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন নিভৃত পরিবেশে আমার আর অনুরাধার মত সেক্সী সুন্দরী দুটো বেশ্যাকে পেয়ে কেউ আর ছেড়ে দেবে? হয়ত বিজলী মাসির সাথে এ ব্যাপারেও কথা বলে রেখেছে। তবে আগের দিন নার্সিংহোমে এ ডাক্তারকে কখনোই অমন বলে মনে হয়নি। আমার স্তনে যৌনাঙ্গে বুকে যতটুকু টেপাটিপি করতে হয়েছে, তা ওই লেডি ডক্টর চৌধুরীই করেছিলেন। ডক্টর মুখার্জি শুধু টিভি মনিটরের দিকে চোখ পেতে রেখেছিলেন। এমন সময় অনুরাধা আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, "ডাক্তার যে কাকে করতে চাইবেন কে জানে। তবে উনি সামান্য ইঙ্গিত করলেই আমি কিন্তু রাজি হয়ে যাব রুমুদি। এমন হ্যান্ডসাম একটা লোকের সাথে সেক্স করবার সুযোগ পেলে, সে সুযোগটা ছেড়ে দেওয়া বোকামি হবে। আচ্ছা রুমুদি, ডাক্তার যদি আমাদের সাথে থ্রিসাম করতে চান? তুমি রাজি হবে? আমার কিন্তু মনে হচ্ছে, অমন সম্ভাবনাই বেশী।" আমার মনটা কেন জানিনা অনুরাধার কথায় পুরোপুরি সায় দিচ্ছে না। তবু ওকে থামাবার উদ্দেশ্যে বললাম, "ও’সব নিয়ে এখনই এত ভাবছিস কেন অনু। দেখাই যাক না, কী হয় না হয়। খদ্দেরদের সাথে তো আমরা সব কিছু করেই অভ্যস্ত। কিন্তু উনি আমাদের এখানে বসিয়ে রেখে গেলেন কোথায় বল তো? বেশ কিছুক্ষণ তো হল। তবু ফিরছেন না কেন।" এমন সময়েই একটা ছোট বাচ্চার গলা অস্পষ্ট ভাবে কানে এল। একটু সজাগ হতেই মনে হল শব্দটা ভেতরের দিক থেকেই আসছে। সেই সাথে সিঁড়িতে পায়ের শব্দও পেলাম। আমি চট করে অনুরাধাকে বললাম, "চুপ কর। কেউ আসছে বোধ হয়" বলে পেছনের খোলা দরজাটার দিকে চেয়ে রইলাম। মিনিট খানেক বাদেই ডক্টর মুখার্জী পেছনের দরজা দিয়ে চেম্বারে ঢুকলেন। তার হাত ধরে চার সাড়ে চার বছরের ফুটফুটে দেখতে একটা বাচ্চা ছেলে। ডক্টর মুখার্জির অন্য হাতে একটা ফাইল। ঘরের ভেতরে ঢুকেই অনুরাধা আর আমার দিকে চোখ পড়তেই ছেলেটা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর কৌতুহলী চোখে আমাদের দু’জনের মুখের দিকে দেখতে দেখতে ডক্টর মুখার্জীর হাতে ঝাঁকি দিয়ে বলল, "ও বাপি, এখানে তো দু’জন আছে? কে আমার মামি?" ডক্টর মুখার্জি বাচ্চাটার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, "আদি সোনা, সেটা তো তোমাকেই খুঁজে বের করতে হবে। তুমি না ইন্টেলিজেন্ট? তুমি নিজেই দেখে চিনে নেবার চেষ্টা কর" বলে তার হাতে ধরা ফাইলটা টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে হেসে বললেন, "আপনারা কিছু মনে করবেন না মিনুদেবী। এ হচ্ছে আমাদের একমাত্র ছেলে। আদি, মানে আদিত্য মুখার্জী। আমার চেম্বার বন্ধ থাকলে যতক্ষণ বাড়ি থাকব ততক্ষণ একে আমার কাছ থেকে দুরে রাখবার উপায় নেই। আর একটা কথা আপনাদের আগে থেকেই জানিয়ে রাখছি। অজানা অচেনা মেয়ে বা মহিলা দেখলেই ও তাদের অনেককেই মামি মামি বলে ডাকতে শুরু করে। আপনারা কিন্তু প্লীজ ওর কথায় কোনকিছু মাইন্ড করবেন না। আর এই নিন, আপনার সমস্ত টেস্ট রিপোর্ট এ ফাইলে আছে।" আমি ছেলেটার নাম শুনেই যেন কেঁপে উঠলাম। আদি! আদিত্য!! এ তো আমার বড়দার নাম ছিল। এ ছেলেটার নামও আদিত্য!? আমি ডক্টর মুখার্জির হাত থেকে ফাইলটা নিতে নিতে বললাম, "আপনার ছেলেটি কিন্তু ভারী মিষ্টি দেখতে ডক্টর। কিন্তু এ ফাইলের রিপোর্ট দেখে আমি তো কিছু বুঝতে পারব না ডক্টর। আপনি যদি আমার সমস্যার কথাটা একটু বুঝিয়ে বলেন...." ডক্টর মুখার্জী আবার মিষ্টি করে হেসে বললেন, "একেবারেই কোন সমস্যা নেই। ইউ আর পারফেক্টলি অলরাইট। কিন্তু ও’সব ব্যাপার পরে বলছি। একটু অপেক্ষা করুন। আগে ছেলেটাকে সন্তুষ্ট করে ভেতরে পাঠিয়ে দিই।" আমি চোখ ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে চাইতেই দেখি ছেলেটা আমার আর অনুরাধার চেয়ার দুটোর মাঝে দাঁড়িয়ে বারবার ঘুরে ঘুরে একবার আমাকে আর একবার অনুরাধাকে দেখে যাচ্ছে। তার চোখ দেখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, সে আমাদের দু’জনের মুখ দুটো বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে কাউকে চিনতে চেষ্টা করে যাচ্ছিল। ছেলেটা সত্যিই এত সুন্দর যে ওকে আমার আদর করতে ইচ্ছে করল। আমি ওর গাল দুটো আলতো করে টিপে দিয়ে বললাম, "তোমার নাম আদি?" ছেলেটা আমার দিকে ঘুরে আমার মুখের দিকে খুব তীক্ষ্ণ চোখে চুপচাপ চেয়ে থেকেই নিজের মাথা নাড়ল। আমি ওকে আমার কাছে টেনে নিয়ে বললাম, "ভারী সুন্দর মিষ্টি নাম তোমার। তোমার নামটা যেমন মিষ্টি, তুমি দেখতেও ঠিক ততটাই মিষ্টি।" এমন সময় আমার চোখে পড়ল অনুরাধা একটা বেশ বড় চকলেটের প্যাকেট সকলের চোখের আড়ালে আমার দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমিও মনে মনে ভাবছিলাম এই ছোট্ট বাচ্চাটার হাতে কিছু একটা দিতে পারলে ভাল হত। কিন্তু এখানে এসে যে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়ব তা তো আর আগে থেকে আন্দাজ করতে পারিনি। অনুরাধা চকলেটের প্যাকেটটা এগিয়ে দিতে আমি একটু খুশী হয়েই সেটা হাত বাড়িয়ে নিলাম। আদি তখন আমার মুখের দিকে একপলকে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ আমার দুটো গালে হাত রেখে বলল, "তুমিও তো খুব সুন্দর। একেবারে ঠিক ছবিটার মত। তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে মামি? বাপি তোমাকে খুঁজে এনেছে, তাই না?" আমি আদির কথা শুনে অবাক হলাম। ছেলেটা কি বলছে? আমি ছবিটার মত সুন্দর! আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম!! ওর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে একবার অনুরাধা আর একবার ডক্টর মুখার্জীর দিকে চাইতেই ডক্টর মুখার্জী আমাকে ঈশারা করে তার ছেলেকে বলল, "আদি সোনা। এবার তো মামিকে দেখেছ। এবার তুমি আমার কাছে এস সোনা।" আদি আমার চেয়ার ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বলল, "না বাপি। আমি মামির কাছে থাকব এখন। তারপর মামিকে নিয়ে আমার ঘরে যাব। মা মামিকে দেখে কত খুশী হবে, তাই না বাপি? আমি বলব, আমি মামিকে খুঁজে এনেছি।" আমি ছেলেটার কথা শুনে আরও ঘাবড়ে গেলাম। সত্যিই কি ওর মামি কোথাও হারিয়ে গেছে? আমাকে কি সত্যিই ওর মামির মত দেখতে! কিন্তু ওর ভুল ধারণাটা ভেঙে দিয়ে সত্যি কথাটা যেন আমার মুখেই আসছিল না। আমি নিজের অজান্তেই ওকে আমার কোলে তুলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম, "আদি, সোনা বাবা। তুমি এটা নেবে?" বলে চকলেটটা ওর সামনে তুলে ধরলাম। আদি চকলেটটা দেখে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েও হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, "না, মা আমাকে চকলেট খেতে বারন করেছে।" ডক্টর মুখার্জী একটু হেসে বললেন, "ঠিক আছে আদি সোনা। উনি যখন দিচ্ছেন তখন তুমি নিতে পারো। আমি তোমার মাকে বলে দেব, আজ সে তোমায় বকবে না। আর তাছাড়া তুমি যদি তাকে বল যে তোমার মামি তোমাকে এটা দিয়েছে, তখন সে আর কিচ্ছু বলবে না তোমাকে।" এমন সময়ে একটা বড় ট্রে হাতে করে একটা মেয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে এসে ঢুকল। সে ট্রে-টাকে টেবিলে নামিয়ে রাখতেই দেখি চা বিস্কুট ছাড়াও আরও দু’তিন রকমের খাবার জিনিস তাতে রাখা। আদি তার বাবার কথা শুনে আমার হাত থেকে চকলেটটা নিয়ে নিতে আমি বললাম, "এ’সবের কী প্রয়োজন ছিল ডক্টর?" ডক্টর সামান্য একটু হেসে বললেন, "চেম্বারে বা নার্সিংহোমে ইচ্ছে থাকলেও ডাক্তাররা এ’সব ফর্মালিটি করতে পারে না। কিন্তু আপনাকে আমি প্রথম দিন দেখেই বুঝেছিলাম যে আমার ছেলে আপনাকে দেখতে পেলেই তার মামি বলে ধরে নেবে। আমার অনুমান সত্যি কি না, সেটা যাচাই করবার জন্যেই আজ আপনাকে এখানে আসতে বলেছিলাম। আমার অনুমানটা যে ঠিক ছিল তা তো দেখতেই পেলেন। আর বাস্তবে না হলেও আমার ছেলে তো আপনাকে তার মামি বলেই ভাবছে। আর আমার ছেলের মামিকে সামান্য একটু চা না খাওয়ালে কি চলে, বলুন? আপনি অত টেনশন নেবেন না। আর তাছাড়া, আজ তো পুরোপুরি ছুটির মুডেই আছি আমি। নিন, খেতে খেতেই রিপোর্টের ব্যাপারে আমরা কথা বলব’খন" বলেই কাজের মেয়েটিকে বললেন, "শেফালী, তুই আদিকে নিয়ে ঘরে যা। আমরা কাজের কথাটুকু সেরে নিই।" কাজের মেয়েটি কাপে কাপে চা ঢেলে দিয়ে ডক্টর মুখার্জী আর অনুরাধার হাতে দু’জনের কাপ তুলে দিয়ে তৃতীয় কাপটা নিয়ে আমার কাছে এসে আমার মুখের দিকে অবাক চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর আমার দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল, "নিন দিদি।" আমি মেয়েটার মুখের ভাব দেখে মনে মনে একটু অবাক না হয়ে পারলাম না। কিছুক্ষণ আগে আদি আমার মুখটা যেভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল, এ কাজের মেয়েটাও প্রায় সেটাই করতে যাচ্ছিল। কিন্তু আমার সাথে চোখাচোখি হতেই সে নিজেকে সামলে নিল। কিন্তু ওর ওই কয়েক মূহুর্তের চাউনিতেই আমার মনে হল যে ও যেন মনে মনে আমার মুখটায় তার পরিচিত কোন একটা মুখের মিল খোঁজবার চেষ্টা করছিল। আমি চায়ের কাপটা হাতে নিতে মেয়েটা আমার কোল থেকে আদিকে নেবার চেষ্টা করতেই আদি আমাকে আঁকড়ে ধরে বলল, "না না। আমি এখন মামির কাছেই থাকব। মামি আমাকে চকলেট খাইয়ে দেবে।" ছেলেটার কথা শুনে আমার বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল যেন। এ অভিজ্ঞতা আমার জীবনে এই প্রথম। খুব ইচ্ছে করছিল ছেলেটাকে আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু ডক্টর মুখার্জী তো আমাদের সম্পর্কে সব কিছুই জানেন। একটা বারবণিতা হয়ে ডক্টরের সামনেই তার ছেলেটাকে ওভাবে আদর করতে কুণ্ঠাবোধ হচ্ছিল আমার। যদি উনি কিছু মনে করেন। কাজের মেয়েটা আদিকে জোর করে আমার কোল থেকে নেবার চেষ্টা করতে করতে আমার মুখের দিকে চেয়ে একটু হেসে বলল, "হ্যাঁ বাবুসোনা, তোমার মামিই তো তোমাকে চকলেটটা খাইয়ে দেবেন। কিন্তু তোমার মামি যে অসুস্থ। বাপি যে এখন তোমার মামিকে ইঞ্জেকশন দেবেন। তুমি তো সেটা দেখে ভয় পাবে। তাই না? তাই এখন ঘরে চল, মামির ইঞ্জেকশন নেওয়া শেষ হলে তুমি পরে আবার এসে মামির কোলে বোসো। এখন আমার সাথে এসো।" আদি সাথে সাথে আমার কোল থেমে নেমে চকলেটটা টেবিলের ওপর রেখে বলল, "ঠিক আছে। কিন্তু আমি কিন্তু আবার আসব মামি। তুমি নিজে হাতে আমাকে এটা খাইয়ে দেবে কিন্তু।" আমিও হেসে ওর গাল টিপে দিয়ে বললাম, "ঠিক আছে সোনা। তুমি পরে এসো।" আদিকে নিয়ে বেরিয়ে যাবার পরই ডক্টর আমাদের দু’জনকে চা খেতে বলে বললেন, "কিছু মনে করবেন না মিনুদেবী। আদির মামার ঘরে তার এক প্রেমিকার ছবি আছে। অবশ্য আমরা বাড়ির লোকেরাই শুধু জানি যে ওটা তার প্রেমিকার ছবি। কিন্তু আমাদের চেনা পরিচিত সবাই জানে যে ওটা আমার শালার স্ত্রীর ছবি। আদি সব সময় সেই ছবির মেয়েটিকেই তার মামি বলে ডাকে। আর হয়ত ব্যাপারটা কাকতালীয়ই। কিন্তু ছবির ওই মেয়েটির সাথে আপনার মুখের একটা আশ্চর্য্য রকম সাদৃশ্য আছে। তাই আমি জানতাম যে আপনাকে দেখলেই আদি আপনাকে ওর মামি বলে ভাববে। তবে আপনি প্লীজ কিছু মনে করবেন না। ওর কথায় আপনি দুঃখ পেলে বা আপনার খারাপ লাগলে আমি ওর হয়ে মাফ চেয়ে নিচ্ছি। আসলে বুঝতেই তো পারছেন, ছোট বাচ্চা তো। আসল নকল বোঝবার মত বয়স তো এখনও হয়নি।" আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললাম, "না না ডক্টর। ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি। তবে একটু অবাক নিশ্চয়ই হয়েছিলাম, সেটা অস্বীকার করতে পারব না। আপনার কথা শুনে এখন ব্যাপারটা আমার কাছে ক্লিয়ার হল। তা ডক্টর, এবার আমার রিপোর্টের ব্যাপার নিয়েই একটু খুলে বলুন না। আমার সমস্যাটা কী হয়েছে? আর এখন আমার অবস্থা কেমন?" ডক্টর মুখার্জীও চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, "যে সমস্যাটা আপনার হয়েছিল, সেটা এমন মারাত্মক কিছু ছিল না মিনুদেবী। অমন সমস্যা, আফটার থার্টি, যে কোন মেয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে। আর ডাক্তার ঘোষাল আপনাকে যে সব ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছিল, সে’সব খুব ভালভাবে নিয়ম করে খেয়েছেন বলেই এ সমস্যা পুরোপুরি ভাবে সেরে গেছে। এবারকার রিপোর্ট অনুযায়ী আপনি এখন হান্ড্রেড পার্সেন্ট ওকে। আপনাদের মাসির অনুরোধে আপনার শরীরের প্রায় সমস্ত অর্গ্যানই আমরা টেস্ট করে দেখেছি। সব কিছু একেবারে হেলদি আর পারফেক্ট আছে। তাই মনে আর কোন রকম দুশ্চিন্তা পুষে রাখবেন না।" আমি ডাক্তারের কথা শুনে একবার অনুরাধার মুখের দিকে চাইতেই অনুরাধা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা ডক্টর, যদিও ওর আগের রিপোর্টগুলো আমরা ঠিক দেখিনি। তবে মাসিকেই নাকি ডাক্তার বলেছিলেন যে ওর ভেতরে নাকি একধরণের ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়েছিল। আপনারা কি ওই ব্যাপারটা ভালো করে টেস্ট করেছিলেন? মানে, সেটা পুরোপুরি সেরে গেছে তো?" ডক্টর মুখার্জী মিষ্টি করে হেসে জবাব দিলেন, "আগের ডাক্তারের রিপোর্টও আমরা দেখেছি। তাই সে জিনিসটা আমরা খুব মাইনিউটলি পরীক্ষা করে দেখেছি। আর ও ধরণের ইনফেকশন হলে শরীরের কোথায় কোথায় তার সাবসিকুয়েন্ট এফেক্ট হতে পারে, এসব কিছুও আমরা খুব ভাল ভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি। এভরিথিং ইজ ওকে। আর কোথাও কোনরকম সমস্যা নেই। একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।" আমি কৃতজ্ঞ চোখে ডাক্তারের দিকে চেয়ে বললাম, "আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ডক্টর। আপনি সত্যি আমায় নিশ্চিন্ত করলেন। তবে, আপনি যদি আর কোন কিছু অ্যাডভাইস করতে চান, তাহলে বলুন।" ডক্টর মুখার্জী আগের মতই মিষ্টি করে হেসে বললেন, "একটাই উপদেশ শুধু দেবার আছে। সব সময় হাসিখুশি থাকবার চেষ্টা করবেন।" আমিও ডাক্তারের কথা শুনে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে বললাম, "থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। কিন্তু ডক্টর এ’সমস্ত টেস্ট ফেস্ট করা বাবদ আমাকে কত দিতে হবে?" ডক্টর মুখার্জী একটু অবাক হয়ে বললেন, "সে’সব তো নিশ্চয়ই চুকে বুকে গেছে। বিল পেমেন্ট না হলে তো আমি রিপোর্টগুলো আনতেই পারতাম না। আর সে’সব ব্যাপার তো আমরা ডাক্তাররা দেখি না। নার্সিংহোমের সে’সব ব্যাপার ওখানকার স্টাফেরাই দেখে থাকে। তবে বিলের পেমেন্ট বাকি থাকলে রিপোর্টগুলো আমার হাতে তারা কিছুতেই দিত না। তা আপনি বলতে চাইছেন যে আপনি নিজে বিলের পেমেন্ট করেন নি। তাহলে হয়ত আপনাদের মাসিই সেটা করে দিয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন সে’কথা।" আমি হাতজোড় করে নমস্কার করে বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে ডক্টর। সে বিলের কথা না হয় মাসির কাছেই জেনে নেব। কিন্তু আপনার ফী-টা? সেদিনও তো চা খেয়ে আপনার মিষ্টি কথায় ভুলে আপনার ফী দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। আজ অন্য কিছু কথার আগে সেটা বলুন প্লীজ।" ডক্টর মুখার্জী আবার হেসে বললেন, "সেটা নিয়ে আপনি না ভাবলেও চলবে। সেদিনের ফীও আমি যেমন পেয়ে গেছি, আজকের ফীও আমি ঠিকই পেয়ে যাব। ওটা নিয়ে আমার ভাবনা নেই। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন মিনুদেবী। এই চকলেটটা কিন্তু আদিকে আপনাকেই খাইয়ে দিতে হবে। তার আগে কিন্তু যেতে পারবেন না কিছুতেই।" আমি একটু করুণ ভাবে হেসে বললাম, "ডক্টর, আপনার ছেলেটা সত্যিই খুব মিষ্টি। ওকে আমার খুব আদর করতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু, ও তো ছোট। ও তো আর ভাল মন্দ কিছু বোঝে না। কিন্তু আপনি তো আমাদের প্রোফেশানের ব্যাপারে সব কিছুই জানেন। আপনাদের মত ভদ্রঘরের একটা ছেলেকে খাইয়ে দেওয়াটা কি আমার পক্ষে উচিৎ হবে?"
Parent