লুকিয়ে ছিলে এতদিন_Written By aarushi1977 [একাদশ অধ্যায়ঃ চরম সঙ্ঘাত]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2013/12/written-by-aarushi1977_3264.html

🕰️ Posted on December 19, 2013 by ✍️ aarushi1977

📖 1095 words / 5 min read


Parent
লুকিয়ে ছিলে এতদিন Written By aarushi1977 একাদশ অধ্যায়ঃ চরম সঙ্ঘাত (#01) শনিবার ভোরবেলার ট্রেন ধরে দুর্গাপুর চলে যায় দিদিকে নিয়ে আসার জন্য। কাল বিকেলে ফেরার ফ্লাইট। হাতে শুধু মাত্র আজ আর কাল, কিছু একটা দিয়ে শুরু করতে হবে না হলে আবার কবে ফিরবে কবে কথা হবে কিছুই জানে না স্যামন্তক।  দুপুরে খাওয়ার পরে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় পুবালী "কিরে কি উল্টো পাল্টা বলে এসেছিস তুই, বন্দনাকে?" "আমি কিছু বলিনি।" "বাড়ির সবাই কে কিরকম সেটা তো খুলে বলে এসেছিস।" "কেন, তাতে খারাপটা কি করেছি আমি। জানাতে হবে না আমাদের বাড়ির কে কি রকম। পাপা আর বাবা মানবে না। মায়ের কথা তো একরকম কেউ শোনে না, জেঠিত তথৈবচ। সেখানে আমার সামনে দুটো রাস্তা খোলা থাকে, এক, বাড়ির মত না নিয়ে বিয়ে করা, দুই, পাপার কথা মেনে সাতাস আঠাস বছরে তার পছন্দ করা মেয়ে কে বিয়ে করা। আমার অবস্থা ভেবে দেখেছিস তুই?" বুকের ওপরে এক বিশাল পাথর চেপে ধরে আছে পুবালীর, কিছুতেই সেই পাথর সরাতে পারছেনা, ঠিক ভাবে যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, "জানি তোর অবস্থা, তবে আমাকে তো একটু ভাবতে দিবি। সিতাভ্রর সাথে আমি কথা বলি তারপরে।" "আমাকে একটু নিজের মতন করে ভেবে কাজ করতে দিবি? আমি বলব পাপাকে, দেখা যাক কি হয়। আমি কাউকে ফেলতে পারবো না, না বন্দনাকে না বাড়ির কাউকে। সুতরাং আমি আগে বলি তার উত্তর শুনি তারপরে আমি আমার নেক্সট স্টেপ নেব।" "ঠিক আছে, বলে দেখ। এটা জেনে রাখিস যে পাপা ভীষণ রেগে যাবে, কথা কাটাকাটি হবে। আমি তোর মুখ দেখে বলতে পারি যে একটা বিশাল ঝড় আসছে।" বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে থাকে দিদির দিকে, কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না স্যামন্তক। কথা কি করে শুরু করবে। বন্দনার কথা শুনে অহমে লেগেছে, নিজের জোরে কি কিছু করতে পারে না? ছাদের থেকে নেমে দেখে জেঠু খাবার টেবিলে বসে নিজের কিছু কাজ করছেন। স্যামন্তক পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, এমনিতে যখন জেঠু কিছু কাজ করেন তখন কেউ তাকে বিরক্ত করেন না। পুবালী পেছনে দাঁড়িয়ে আছে শোনার জন্য যে কি হয়। বুকের মাঝে যেন যুদ্ধের দামামা বাজছে, এখুনি যেন পাপা মুখ তুলে দেখবে, স্যামন্তক কে জিজ্ঞেস করবে আর বাড়িতে একটা বিশাল বম্ব ফাটবে। স্যামন্তকের গলা কাঠ হয়ে গেছে, জিব জড়িয়ে যাচ্ছে "পাপা, তোমার সাথে একটা কথা আছে?" দুহাতে বুকের কাছে নিয়ে গিয়ে ইষ্ট নাম জপতে শুরু করে দিয়েছে পুবালী। পুবালীর বাবা মাথা তুলে ভুরু কুঁচকে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে গম্ভির গলায় প্রশ্ন করে "কি হয়েছে?"  "পাপা, আমি একজন কে ভালবাসি।" পুবালী দু’চোখ বন্দ করে নেয়, এবারে ফেটে পড়বে বাড়ি। স্যামন্তক চুপ করে দাঁড়িয়ে, উত্তরের আশায়, কি বলবে জেঠু। "হুম।" একটু ঝুঁকে পেছনে দেখে পুবালী দাঁড়িয়ে, মেয়ের উদেশ্যে প্রশ্ন করেন সূর্যকান্ত ব্যানার্জি "কি ব্যাপার।" পুবালীর পায়ের তোলা থেকে যেন মাটি সরে গেছে। ধিরে ধিরে এগিয়ে এসে বলে "পাপা, সামু বড় হয়েছে, নিজের পছন্দ অপছন্দ আছে।" কথাবার্তা শুনে পুবালীর মা ঘরের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসেন। "ঠিক আছে, বেশ তো।" তারপরে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলেন "তুই ভালো ভাবে জানিস, যে এই বাড়ির বউমা ব্রাহ্মণ পরিবারের হবে, দিল্লীর মেয়ে হলে চলবে না।" স্যামন্তকের নিঃশ্বাস বন্দ হয়ে আসছে ধিরে ধিরে, মাথা নিচু করে বলে "দিল্লীর মেয়ে নয়, পাপা।" "মেয়ের নাম কি?" চোখ বন্দ মাথা নিচু বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক "বন্দনা সরকার।" পুবালী চুপ করে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের পেছনে, এবারে ওর দিকে কামান দাগা হবে সেটা নিশ্চিত কেননা বন্দনা ওর বান্ধবী। মেয়ের দিকে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করেন "বন্দনা মানে তোর বান্ধবী?" "হ্যাঁ" গলা শুকিয়ে কাঠ পুবালীর। "তার মানে লাস্ট ডিসেম্বরে যে তোর কাছে গেছিল, সেটা ঠিক তোর বাড়ি যাবার একটা ছুতো মাত্র!" নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন "শুনেছ ছেলে মেয়ের কান্ড। কতবার অভ্র কে বারণ করেছিলাম যে দিল্লী না পাঠাতে। তোমার কথা শুনে দিল্লী পাঠিয়ে তো এই হলো?" স্যামন্তকের দিকে কড়া আওয়াজে প্রশ্ন করে "কতদিন ধরে এই সব চলছে?" উত্তর দেবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ভাই বোনে, কি বলবে। পুবালী পায়ের নখ দিয়ে মেঝের ওপরে আঁচড় কাটে। "এক বছর হয়ে গেছে।" নিচু গলায় উত্তর দেয় স্যামন্তক। "অভ্র এই সব জানে?" প্রশ্ন করেন সূর্যকান্ত ব্যানারজি, অভ্রকান্তি স্যামন্তকের বাবা। "না বাবা জানে না।" "তোকে অনেক আগে বলেছিলাম যে কোলকাতা ছেড়ে যাস না, আমাদের কথা না শুনে তুই এই কাজ করলি?" জেঠুর আওয়াজে ঠাণ্ডা হুঙ্কার, যেন বলতে চান যে স্যামন্তক বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পড়ে বিগড়ে গেছে। "ভুলে যাও ওসব। এমি একবার বলে দিয়েছি যে এ বাড়ির বউমা ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে হবে। তোর যদি এত বিয়ে করার শখ হয় তাহলে আমি তাড়াতাড়ি তোর জন্য মেয়ে দেখব, কিন্তু বন্দনা নয়।" স্যামন্তক সাহস যোগাড় করে, সারা শরীরে যত রক্ত কণা ছিল সবাইকে প্রানপনে নিজের হৃদপিণ্ডের মাঝে ডেকে বলে "বন্দনা তো খারাপ মেয়ে নয় পাপা?" এই প্রশ্ন স্যামন্তকের মুখে আশাতীত, সূর্যকান্ত কোনদিন ভেবে উঠতে পারেননি যে স্যামন্তক ওনার সামনে মাথা তুলে কথা বলবে। থমকে যান প্রশ্ন শুনে "ঐ মেয়ের ব্যাপারে আমার সব কিছু জানা আছে। আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না। মেয়ে আমাদের কুলের নয়, মেয়ে তোর চেয়ে বড়, ঐ মেয়ের চরিত্র খারাপ, আমার বাড়ির বউমা হবার যোগ্য নয় সে। ব্যাস আমি বলে দিয়েছি হবে না, তো হবে না।" কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল স্যামন্তক, বেগতিক দেখে পেছন থেকে হাত চেপে ধরে পুবালী, ইশারা করে চুপ করে যেতে। তারপরে বাবার দিকে চেয়ে বলে "বন্দনা খারাপ মেয়ে নয়, পাপা। তুমি তোমার কুল মর্যাদা বজায় রেখে যে মেয়ে আনবে, সে ভালো হবে, সে তোমাদের দেখবে তার কি নিশ্চয়তা আছে?" মেয়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভির স্বরে বলেন "তোকে তো শান্তিনিকেতন পাঠান ভুল হয়েছিল আমার। তুই গ্রাজুয়েসান কোলকাতা থেকে করতিস তাহলে এই সব কিছু দেখতে হত না। তুই তোর ভাইয়ের মাথা খেয়েছিস। আমি অভ্রর সাথে কথা বলব।" তারপরে স্যামন্তকের দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন "তুই কোলকাতা ছেড়ে কোথাও যাচ্ছিস না।" পুবালীর মা, পুবালীর বাবাকে শান্ত করার জন্য বলেন "কি বলছ তুমি, মেয়েকে?" "আমি কি ভুল বলেছি। বড় মেয়ে দেখ ভালো আছে, ছোটো টাকে দেখ, বাবা মার কথা শোনে। আর এই দুটো সেই ছোটো বেলা থেকে না পড়াশুনা ঠিকঠাক করে করল না আমাদের ব্যাপারে একটু ভাবল।" রাগে দুঃখে মাথা ঘুরতে শুরু করে পুবালীর, কান লাল হয়ে যায়, নাকের পাটা ফুলে উঠেছে "আমি কি এমন করেছি পাপা?" পুবালী জিজ্ঞেস করে "তুমি যেখানে বলেছ সেখানে আমি বিয়ে করেছি, যা বলে গেছ তাই আমি করেছি।" চোখের জল মুছে বলে "আমাকে দিল্লী কে নিয়ে যাবে?" "আমি এখুনি সিতাভ্রকে ফোন করছি, ও এসে তোকে নিয়ে যাবে। আজ কেউ কোথাও যাবে না এটা আমার শেষ কথা।" হুঙ্কার ছেড়ে উঠে পড়েন সূর্যকান্ত।  স্যামন্তক অটল নিজের কথায় "আমি দিদিকে নিয়ে দিল্লী যাচ্ছি কাল। আমার অফিস আছে পরশু থেকে।" "মানে, তোরা দুজনের মধ্যে কেউ আমার কথা শুনতে নারাজ? তোরা যখন সব কিছু ঠিক করে নিয়েছিস নিজেদের মধ্যে তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন।" পুবালী একটু নরম গলায় বলে "পাপা, আমি সামুকে বুঝিয়ে দেব। পাপা ওকে আমার সাথে যেতে দাও।" "যা বোঝানোর বুঝিয়ে দে তোর ভাইকে। কাল অভ্র আসবে সবার সামনে কথা হবে, আর সিতাভ্র কে আমি আজ ফোন করছি, কাল বা পরশু ও এসে তোকে নিয়ে যাবে।" সংকলকের মন্তব্যঃ লেখিকা আরুশী এই পর্যন্তই লিখেছেন এবং বেশ অনেকদিন যাবত লেখালেখির জগত থেকে অনুপস্থিত। তিনি আবার কখনও এই গল্পটিতে হাত দিলেই আমরা সাথে সাথে গল্পটি আপডেট করবো। ধন্যবাদ সব পাঠক বন্ধুদেরকে।
Parent