জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস_Written By Lekhak (লেখক) [৯ম খন্ড (চ্যাপ্টার ২৫ - চ্যাপ্টার ২৭)]

🔗 Original Chapter Link: https://chotiheaven.blogspot.com/2014/05/written-by-lekhak_4923.html

🕰️ Posted on May 25, 2014 by ✍️ Lekhak

📖 3031 words / 14 min read


Parent
জীবন যে রকম - একটি উপন্যাস Written By Lekhak (লেখক) ।।পঁচিশ।। শুভেন্দু হেসে বললো, "রনি আর মাধুরীর ভালোবাসার একটা কাহিনী শুনবি? তাহলে তোর আরো পেট ফাটবে হাসতে হাসতে।" রনি দেখি, চুপ করে রয়েছে, আর মুচকী মুচকী হাসছে। বুঝতে পারছে শুভেন্দু এবার কি বোমা ফাটাবে। শুভেন্দু বললো, "আমাদের বাড়ীর পেছনটায় কিছুটা এগিয়ে গেলে তুই একটা বাগান দেখতে পাবি। বাগানটা এখন পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। আগে ওটা খোলা বাগান ছিলো। রনি যখন প্রথম প্রথম আমাদের বাড়ী আসা শুরু করলো, তখন ও ছুঁড়ি কে নিয়ে ওই বাগানটায় ঘুরতে যেতো। চারিদিকে সুন্দর সুন্দর নারকেল গাছ আর সুপারি গাছে ভর্তি। প্রেমিক প্রেমিকারা যেমন গাছের তলায় ছায়াতে বসে সুন্দর সুন্দর প্রেমের কথা আর মনের কথা বলে, ও আর ছুঁড়ি দুজনে মিলে বসে সেই কথাগুলোই বলতো।" আমি বললাম, "তো? ভালোই তো। বাড়ীর কাছেই বাগান, আর সেই বাগানে প্রেম। মন্দ কি?" শুভেন্দু বললো, "আরে বাবা সে তো বুঝলাম। কিন্তু আসল কথাটা তো তুই শুনলি না।" আমি বললাম, "কি আসল কথা?" শুভেন্দু বললো, "দুজনে কথা বলবে কি? প্রেমের কথা শুরু করতেই তো একহপ্তা পার। যে জায়গাটা ওরা বসতো, দুজনে শুধু গোল গোল করে ঘাস ছিঁড়ে যেতো। এক হপ্তা পেরিয়ে গেলো। বেশ খানিকটা ঘাস ছিঁড়ে, জায়গাটা ন্যাড়া মতন হয়ে গেলো। এদের প্রেমের কথা আর বলা হল না।" রনি গ্লাসে চুমুক দিয়েছে সবে। এমন ভাবে শুভেন্দু কথাটা বলেছে, হাসিতে ভীষম খেয়ে রনির তখন যাচ্ছেতাই অবস্থা। হাসি আমিও চেপে রাখতে পারছিলাম না। শুভেন্দু বললো, "এটা কিন্তু গুল নয়। একেবারে সত্যি কথা।" বলতে বলতেই মাধুরী ঘরে এসে ঢুকলো বিদিশাকে সঙ্গে নিয়ে। রনির দিকে তাকিয়ে মাধুরী বললো, ও শুরু করে দিয়েছো বুঝি? সত্যি তোমাকে আর ছোড়দাকে কোথায় বাঁধিয়ে রাখবো বলো তো দেখি? শুভেন্দু বললো, এই ছুঁড়ী, তুই আমাদের গার্জেন না কি রে? আজ শুধু আনন্দ আর ফুর্তী করবো, তবেই না জমবে। দেবকে আমরা কতদিন বাদে পেলাম বল তো? বিদিশা ঘরে ঢুকে আমার সামনেই বসলো। মাধুরী আমার দিকে তাকিয়ে, চেঁচিয়ে বললো, ও তুমিও শুরু করে দিয়েছো? খাচ্ছো বসে এদের সঙ্গে? আমি না বলার মত ঘাড় নাড়ছিলাম। মাধুরী বললো, ওই তো খালি গেলাস টা। তোমার পাশেই দেখলাম। বিদিশা তোমার কাছে যাওয়া মাত্রই তুমি ওটাকে সোফার তলায় ঢুকিয়ে দিলে। বিদিশার সামনে বুঝি মদ খাবে না? বিদিশা তখন তখন সামনে বসে আমাদের তিনজনকেই দেখছে। শুভেন্দু বললো, ব্যাটাছেলেরা চা খাবে না, সিগারেট খাবে না, মদ খাবে না। তো কি খাবে বল দেখি। আমাদের বুঝি সখ আহ্লাদ কিছু নেই? রনি মাধুরীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো, এই যে সহধর্মিনী আমার। তুমি এখন চুপ করো। দেব এখন গান শুরু করবে। শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে বললো, এই দাঁড়া দাঁড়া। দেবের কিন্তু একটা স্বভাব আছে, সবাই জানিস তো? রনি সঙ্গে সঙ্গে বললো কি? শুভেন্দু বললো, ওকে কলেজে তো আমি দেখেছি, শেষের দিকে বিদিশার যে গানগুলো পছন্দ, সেইগুলোই বেশী বেশী করে গাইতো। ব্যাটা এমন ঢ্যামনা। আজ কিন্তু ওসব চলবে না। আমাদের পছন্দের গান তোকে গাইতে হবে। আমি বললাম, কি গাইবো বল? শুভেন্দু বললো, তুই ওটা দিয়ে শুরু কর। 'এ রাতে এ মৌসম, নদীকা কিনারা এ চঞ্চল হাওয়া।' আমি বললাম, এই গানটা কিন্তু বিদিশারও খুব পছন্দ। সঙ্গে সঙ্গে শুভেন্দু বললো, না, না, তাহলে বরঞ্চ তুই ওটা গা, এ মেরী জোহরা জেবীন, তুছে মালুম নেহী, তু অভীতক হ্যায় হাসীন, অউর ম্যায় জওয়ান, তুঝপে কুরবান মেরী জান মেরী জান। মাধুরী বললো, ছোড়দা তুই না? কবেকার সেই সেকেলে মার্কা গান, ভালো ভালো কত গান আছে তা না। রনি মাধুরীকে বললো, তুমি জানো না ডারলিং, দেবের কাছে যা স্টক আছে, গুনে গুনে শেষ করতে পারবে না। নতুন পুরোনো, ক্ল্যাসিকাল, লাভ সঙ সব ও গলায় নিয়ে বসে আছে। খালি একবার করে বিদিশার দিকে তাকাবে, আর মেহেফিল ভরিয়ে দেবে। বিদিশা চুপ করে বসেছিলো, আমি বললাম, আমি আজ কারুর পছন্দের গান গাইবো না। যে কটা গান গাইবো, তোদের সবারই ভালো লাগবে। শুভেন্দু বললো, সেই ভালো সেই ভালো। তুই গা। মাধুরীকে রনি বললো, তুমি হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমিও বসো। বিদিশা যেখানটা বসেছিল, মাধুরী ঠিক তার পাশে গিয়েই বসলো। আমি স্কেল চেঞ্জিং হারমোনিয়ামটা হাতে নিয়ে আঙুলে সুর বেঁধে কিছুক্ষণ হূ হূ করলাম। তারপর গাইতে শুরু করলাম, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই। কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই। নিখিলেশ প্যারিসে, মঈদুল ঢাকাতে, নেই তারা আজ কোন খবরে। গ্র্যাণ্ডের গীটারিস্ট গোয়ানীস ডিসুজা, ঘুমিয়ে আছে যে আজ কবরে। কাকে যেন ভালোবেসে আঘাত পেয়ে যে শেষে, পাগলা গারদে আছে রমা রায়, অমলটা ধুঁকছে দুরন্ত ক্যানসারে। জীবন করে নি তাকে ক্ষমা হায়............. কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই। গান গাইতে গাইতে আমি সবার দিকেই তাকাচ্ছিলাম একবার করে। দেখলাম ওরা সব আমার গান শুনছে, আর সেই পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে যাচ্ছে। মনে পড়ছে কলেজ, কফিহাউস, সেই সোনালী দিনগুলো, যেগুলো কবেই আমরা সবাই হারিয়ে এসেছি। রনি বললো, তুই তো আজ কাঁদিয়ে ছাড়বি রে। আমি দ্বিতীয় গানটা ধরলাম, এতো রাগ নয়, এ যে অভিমান, এ শুধু তোমায় চাওয়ার, আরো বেশী কাছে পাওয়ার, ছল ভরা গান, এ যে অভিমান। দেখলাম বিদিশার চোখটা এবার ছল ছল করছে। হঠাৎ রুমাল দিয়ে চোখটা বারে বারে মুছতে লাগলো। শুভেন্দু বললো, এই বিদিশা তুই কাঁদছিস নাকি? আমি তৃতীয় গানটা শুরু করলাম, জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি তো নই। পাছে ভালোবেসে ফেলো তাই। দূরে দূরে রই। বিদিশা গানটা দু লাইন গাওয়া মাত্রই উঠে ছুট্টে দূরে কয়েক হাত চলে গেল। দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। আমি গান থামিয়ে দিয়েছি, শুভেন্দু আর রনি দুজনেই অবাক। মাধুরী কাছে গিয়ে বিদিশাকে জড়িয়ে ধরলো, কি হয়েছে বিদিশা তুমি কাঁদছো কেন? কোনোরকমে রুমালটা দিয়ে চোখ মুছে বিদিশা বললো, খুব ভুল হয়ে গেছে। দেবের মত নিষ্পাপ ভালো ছেলেকে আমি এভাবে ঠকাতে পারবো না। আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে। আমি গান থামিয়ে হতবাক হয়ে চেয়ে আছি বিদিশার দিকে। মনে একটা প্রশ্ন। হঠাৎ বিদিশা একথা বললো কেন? ।।ছাব্বিশ।। দেখলাম, তখনো বিদিশার ছলছলে দুটি চোখ, গালের ওপর দিয়ে জলের ধারাগুলো নামছে। কোনোদিন বিদিশাকে এভাবে কাঁদতে কখনো দেখিনি। গলায় দম আটকে যাওয়ার মতো একটা শব্দ বের হয়ে বিদিশার সমস্ত মুখটাই কেমন বিবর্ণ হয়ে উঠলো। চোখের জলের ধারা স্তব্ধ করে দিলো আমাদের সবাইকে।  - "একী বিদিশা, তুমি কাঁদছো কেন?" মাধুরী বলে উঠলো, সেই সাথে আমরা সবাই। হারমোনিয়াম ছেড়ে উঠে গিয়ে আমি বিদিশার কাছে গেলাম। ওর কাঁধের ওপর দু'হাত রাখলাম, বিদিশাকে বললাম, "কাঁদছো কেন বিদিশা? কি হয়েছে তোমার? কোনো অসুবিধে? বলবে আমায়?" আমি জানি আমার জীবনের কাহিনীটা এতই করুনতর, এর থেকে প্রেরণা নেওয়ার মত কিছুই নেই। তবু তো মানুষ একটা আশার আলো খোঁজে। একটা দিশাকে ধরে সে বাঁচতে চায়। দিশা যদি আমার সেই বিদিশা হয়, তাহলে একটু আগে ও যা বললো, সেটা ও ফিরিয়ে নিক। আমি জানি না ঠিক কি হয়েছে, তবুও বিদিশা যে আমাকে কখনো ঠকাতে পারে আমি চিন্তাও করতে পারি না। চোখের জলটা রুমাল দিয়ে মুছে বিদিশা বললো, "ভালো গাইছিলে তুমি, গানটা শুধু শুধু আমি থামিয়ে দিলাম। হঠাৎ....." দেখলাম, কষ্ট করেও ও একটু হাসবার চেষ্টা করছে, কিন্তু ভেতরে যেনো এখনো একটা চাঁপা অস্বস্তি রয়ে গেছে, মনের ভেতরে কোনো একটা বিষয় ভীষন তোলপাড় করছে বিদিশাকে। আমাকে খুলে বলতে চাইছে হয়তো, কিন্তু সবার সামনে ঠিক বলতে পারছে না। আমি ওর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে এসে সোফায় বসালাম। মাধুরী বললো, "হ্যাঁ, বসো তো, বসো। কি এত দূঃখ তোমার? আমরা তো সবাই আছি।" শুভেন্দু বললো, "এই বিদিশা, তুই যে কেঁদে কেটে ভাসালি, তাহলে আমাদের আসরটার এখন কি হবে?" বিদিশা মুখ নিচু করে বললো, "ও যেমন গাইছিলো, গাক না। আমি কি বারণ করেছি?" রনি বললো, "তুই এক কাজ কর, বাড়ীতে তুইও ফোন করে বলে দে, আজ আর বাড়ী ফিরছিস না। তারপরে দেবের সাথে তোকে ওর বাড়ী পাঠিয়ে দিচ্ছি। সারারাত দেব তোকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকবে, তুই কেঁদে কেটে ভাসাবি, আর দেব তোকে সান্তনা দেবে।" মাধুরী ধমক লাগালো রনিকে। - "সব সময় এতো ফাজলামী মেরো না তো। সিরিয়াস ব্যাপারের সময়েও তোমরা এতো ইয়ার্কী মারো না, ভালো লাগে না।" শুভেন্দু বললো, "সত্যি বিদিশা, কোনো সিরিয়াস ব্যাপার আছে নাকি? আমাদের সামনে খুলে বলতে তোর কি কোনো অসুবিধে আছে? দেবের কাছে যদি শেয়ার করতে পারিস, তাহলে আমাদের কাছেও তো পারিস। আমরাতো সবাই তোর বন্ধু। ঠিক কিনা? তোর কোনো বিপদ হলে আমরা যেমন তোকে হেল্প করতে পারি। তেমনি তোকে সেই বিপদ থেকে বাঁচাতেও পারি। বল কি হয়েছে বল?" কিছুক্ষণ মাথাটা নিচু করে বিদিশা এবার পাথরের মত বসে রইলো। শুভেন্দুকে ও বললো, "না আজ থাক। এমন সুন্দর মুডটা তোদের নষ্ট করতে আমি চাই না। সুযোগ হলে, পরে নিশ্চই বলবো।" শুভেন্দু বললো, "তাহলে বল, দেব কে তুই বিয়েটা কবে করছিস? প্রেম, ছাড়াছাড়ি, মান অভিমান ওসব অনেক হয়েছে, এখন আর অপেক্ষা করা যাবে না। দিনখন সব পাকা করে ফেলতে হবে।" রনি বললো, "হ্যাঁ লোক খাওয়ানোর সব ব্যাপাটাতো আমিই দায়িত্ব নিচ্ছিই। শুধু বিয়ে আর বৌভাত মিলিয়ে মোট কজন লোক হবে, আমাকে শুধু বলে দিতে হবে। বাকীটা রনির বাঁয়া হাত কা খেল।" আমি দেখলাম বিদিশার মুখে হাসিটা এসেও দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে চোখের পলকে। ঠিকভাবে যেনো প্রাণখুলে হাসতেও পারছে না মেয়েটা। পুরোনো কোনো জমাট বাঁধা দূঃখ ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। প্রবল একটা অস্বস্তিতে রয়েছে বিদিশা, যেটা প্রকাশ করতে পারছে না সহজে। আমি বিদিশাকে যতটা কাছ থেকে দেখেছি, ওর সাথে মিশেছি, ওর চোখের ভাষা আমি পড়তে জানি। জীবনে একবারই ও আমার কাছে কিছু লুকিয়েছিল। সেটা ছিল বিদিশার জীবনের প্রথম প্রেম। কিন্তু সে প্রেমকে প্রেম বলা যায় না। ভালোবাসাটা একতরফা ছিলো বলে সেভাবে দানা বেধে ওঠেনি। তাও বিদিশা তো আমার কাছে লুকোয় নি। স্বীকার করেছে পরে, সত্যিটা সামনে তুলে ধরেছে। দুদিনের প্রেমকে সেদিন না বললেও বিদিশার কিছু যায় আসতো না। কিন্তু আজ যখন এতদিন বাদে, আবার কোনো সত্যিকে চাঁপা দিতে চাইছে না বিদিশা। মনের কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। কি এমন সেই সত্যি? যেটা বিদিশাকে হঠাৎই পাথর করে দিলো? শুভেন্দু বললো, "এই শোন, এবার মনে হচ্ছে আমাকেই কিছু করতে হবে।" বলে হারমোনিয়ামটা কাছে নিয়ে হেঁড়ে গলায় ভ্যা ভ্যা করতে লাগলো। বিদিশা ওই দেখে এবার হেসে ফেললো। রনি বললো, "হ্যাঁ, এইবারে ঠিক হয়েছে। মুড ঠিক হয়ে গেছে। নাও দেব চলে এসো, এবারে তোমাকে কিছু হিন্দী গান গাইতে হবে।" ঘড়ির কাঁটা কখনো থেমে থাকে না। শুভেন্দু আর রনির ফরমাইশ অনুযায়ী একটার পর একটা গান গাইতে গাইতে, আমিও তখন ঘড়ির দিকে তাকাতেও ভুলে গেছি। ওরা দুজনে মাল খেযে নেশায় পুরো চুর। আমার গানের তালে তালে মাঝে মাঝে নিজেরা দুলে দুলে উঠছে। মাধুরী হাসছে, আমিও হাসছি। বিদিশাও একটু আধতু হাসবার চেষ্টা করছে মাঝে মাঝে। ঠিক সাড়ে এগারোটার পর মাধুরী জোর করেই আমার গান থামালো। শুভেন্দু আর রনিকে বললো, "তোমরা কি করছো বলোতো? দেবদা আর বিদিশাকে কি বাড়ী যেতে হবে না? নাও এবার শেষ করো। আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।'" বিদিশা আর আমি পাশাপাশি বসে ডিনার খেলাম। শুভেন্দু বললো, "এরপরে তাহলে আমরা কবে আবার মিট করছি? মিটটা কোথায় হবে? দেবের বাড়ীতে না বিদিশার বাড়ীতে?" রনি বললো, "এই শোন, তোরা কিন্তু আবার আমাদের ভুলে যাস না। কলেজ হলে তবু তোদের একটু চোখে চোখে রাখা যেতো। এখানে তো সেটা হবে না। আমাদের ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না।" শুভেন্দু বললো, "দেব, বিদিশা দুজনের ওপরই আমার সে ভরসা আছে। ওরা দুজনেই আমার কথা রেখে আজ এখানে এসেছে। আমি দারুন খুশী।" বাড়ী থেকে বেরুবার সময় শুভেন্দু আমার হাতটা ধরলো। ওর খুব নেশা হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারছি, তাও বন্ধু প্রীতি খুব বেশী বলে আমাকে একবার জড়িয়ে ধরলো। আবেগ মতন হয়ে বললো, "কি দেব? তোর হাসিটা ফেরালাম তো? এরপরে কিন্তু তুই আমাকে চিরকাল মনে রাখবি। রাখবি কিনা বল?" আমিও শুভেন্দুকে জড়িয়ে ধরলাম। বিদিশা তখন মাধুরীর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে পাশে। শুভেন্দু কানে কানে আমাকে বললো, "ট্যাক্সিতে যেতে যেতে বিদিশার সাথে কথা বলে নিস। আমাদের বলে নি তো কি হয়েছে? তোকে ঠিকই ও বলবে।" আমি বুঝলাম, শুভেন্দুও খুব চিন্তায় আছে ওই ব্যাপারটা নিয়ে। তবে আমাকে আবার আশ্বস্তও করলো শুভেন্দু। বললো, "সেরকম কিছু হবে না হয়তো। আসলে তোর এতগুলো বছর শুধু শুধু নষ্ট করালো বিদিশা। ওইজন্যই মনে হয় দূঃখ আছে মনে।" ঠিক বড় রাস্তার মোড়টা আসতেই আমি একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম। শুভেন্দু আমাকে ওর গাড়ীটা দিতে চেয়েছিলো আমি নিইনি। অনেকদিন গাড়ী চালাই না, সেভাবে অভ্যেস নেই। তাছাড়া গাড়ী নিলে হ্যাপাও অনেক। বাড়ীতে যেহেতু গ্যারাজ নেই, ওই গাড়ী আমি সারারাত বাড়ীর সামনে দাঁড় করিয়েও রাখতে পারবো না। ট্যাক্সিতে যেতে যেতে বিদিশা সেভাবে কথা বলছিলো না। মনে হল, এই গাড়ীতে যেতে যেতে, ওর মুখ দিয়ে কিছু কথা যদি বলাতে না পারি, তাহলে আমারও মন ঠিক শান্ত হচ্ছে না। গাড়ীতে বিদিশার একটা হাত ধরলাম, ওকে বললাম, "তুমি তখন কাঁদছিলে কেন তা আমাকে বললে না?" বিদিশা আমার মুখের দিকে তাকালো। বললো, "দেব, তুমি তো একবারও আমাকে জিজ্ঞাসা করলে না? এই বিদিশা এতদিন কোথায় ছিল? কিভাবে ছিল? আর কেনই বা সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে তোমার কাছেই ফিরে এলো?"  -- "কি হবে ওসব জেনে? কি লাভ তাতে? তুমি ফিরে এসেছো, এটাই তো অনেক বড় আমার কাছে।"  - "তুমি কত অদ্ভূত? কত সহজভাবে সবকিছু মেনে নিতে পারো। বিশ্বাসকে কত সহজ ভাবে জয় করতে পারো তুমি।" বিদিশাকে বললাম, "পৃথিবীতে তো আমি আর একা নই। এরকম কত লোকের জীবনেই তো কিছু না কিছু ঘটেছে। This is a Part of a Life. সবার জীবনে সবকিছু সহজভাবে আসে না। ভালো জিনিষ পেতে গেলে তার জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয়। জীবনে অনেক দাম দিতে হয়।" বিদিশা বললো, "আমি তোমার মত তো এত সরল নই। ভালোবাসার দাম দিতে পারিনি, তোমাকে বিশ্বাস করতে পারিনি, আমি একটা স্বার্থপর ছাড়া কিছু নই।" আমি বললাম, "কি হয়েছে তোমার? এত মন খারাপ কেন? সেই থেকে মুখ ভার। কেঁদে কেটে আমাদেরকেও অস্বস্তিতে ফেলে দিলে। যদি ভেতরের কথাটা খুলে না বলো, তাহলে তো জানতেও পারবো না।" ট্যাক্সির মধ্যে যেন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ। গাড়ীতে পেছনের সীটে আমি আর বিদিশা, দুটি প্রানী। মুখে কোনো কথা নেই, যেন বিরাজ করছে এক গভীর নিঃস্তব্ধতা। আমি ভাবছি, বিদিশা হয়তো কিছু একটা বলবে, তাতে মনে হবে, ওকে ফিরে পেয়েও শেষ পর্যন্ত আর পাওয়া হল না আমার। ও যেমনই দূরে চলে গিয়েছিল আমার জীবন থেকে, ঠিক তেমনি আবার দূরে চলে যাবে। বিদিশাকে হয়তো এ জীবনে পাওয়া আর আমার হবে না। আমাকে অবাক করে বিদিশা বললো, "আমাকে অন্তত দু তিন দিন সময় দাও দেব। আমি তোমার দিব্যি খেয়ে বলছি, শুধু শুধু তোমাকে আমি আর ঠকাতে চাই না।" ল্যান্সডাউনে ওর বাড়ীর সামনে বিদিশাকে ড্রপ করে দেবার সময় ওর মুখ যেন তখন আরোই করুন। একটা আফশোস, গাড়ী থেকে নামার সময় জড়িয়ে ধরে একটা চুমুও খেতে পারলাম না বিদিশাকে। শুধু অল্প একটু হাত নেড়ে বিদিশা চলে গেলো। মনে হলো, যাও বা কিছু একটা পেলাম, তাও যেন সেটা কাছে এসেও আবার দূরে চলে গেলো। ট্যাক্সিতে একা একা বাড়ী ফিরছি আর ভাবছি, ভালোলাগা মূহূর্তগুলো, ভালোলাগা দিনগুলো, মানুষের জীবন থেকে কেন যে দূরে চলে যায়। কিছুই আমরা ধরতে পারি না। কিছুই আমরা রাখতে পারি না। স্বাদ বুঝতে না বুঝতেই জীবনের সব আনন্দ অদৃশ্য হয়ে যায়। ।।সাতাশ।। বাড়ীতে ফিরলাম, মা'কে বিদিশার কথা সেভাবে আর কিছু বলা হল না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমটা আসছে না। সেই পুরোনো স্মৃতি গুলো আমার মনকে এখনও নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। মনে পড়ছিল, বিদিশার সাথে আমার বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মূহূর্তের কথা। একদিন..... সেদিন তখন ঠিক সন্ধ্যে হবো হবো করছে। জায়গাটা কলকাতার ডালহৌসীপাড়ায় কার্জন পার্ক। বিদিশার কোলে মাখা রেখে আমি শুয়ে আছি। বিদিশা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আমার চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলো। আমি ভাবছি, চুমু পাবার আর চুমু খাবার এত সুন্দর জায়গা, তাও বিদিশা ইতস্তত করছে। কেন? আমি যেন বিদিশার কাছ থেকে চুমু পাওয়ারই প্রতীক্ষায়। বিদিশা বললো, "এই তুমি কি করছো বলো তো? তথন থেকে এসে অবধি মুখে কোনো কথা নেই, খালি আমার হাতের আদর খেয়ে যাচ্ছো?" বিদিশাকে বললাম ,"না, না, এখন কি কথা বলার সময় নাকি? দেখছো না কেমন আরাম বোধ করছি। তুমি চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছো, আঙুল চালিয়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছো, আমার তো মনে হচ্ছে, এইভাবেই যেনো তোমার কোলে আমি শুয়ে থাকি।"  - "বাঃ বাঃ, শুয়ে খালি আদরই খেয়ে যাবেন উনি ? কটা বাজে খেয়াল আছে তোমার? দেখো ঘড়ি দেখো, বাড়ী যেতে হবে না বুঝি?"  -- "আচ্ছা বিদিশা, কদিন ধরেই দেখছি, তুমি সেভাবে আমাকে চুমুটুমু খাচ্ছো না। ব্যাপারটা কি বলো তো?"  - "এই তুমি কিন্তু এখন আর চুমু খেতে বলবে না আমাকে। এই জায়গাটা সেরকম ভালো নয়। দূরে বসা ঐ লোকগুলোকে দেখছো? কেমন ঘুরঘুর করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। যেনো মেয়েছেলে কোনোদিন দেখেনি এভাবে।"  -- "আরে দূর, এটা হলো কার্জন পার্ক। এখানে সবাই প্রেম করতে আসে। প্রেমিক প্রেমিকার গালে চুমু খায়, ঠোঁটে চুমু খায়। প্রেমিকাও প্রতিদান দেয়। আসলে তোমাকে দেখতে একটু বেশী সুন্দর কিনা? তাই ওরা তোমার দিকে তাকাচ্ছে।"  - "তুমি বাড়ী যাবে না দেব?"  --  "যেতে তো ইচ্ছে করছে না বিদিশা, মনে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে সারারাত শুধু ঘুরি। এখান থেকে তোমাকে নিয়ে চলে যাই ইডেন গার্ডেন্স, তারপরে ময়দান। এইভাবে আদর খেতে খেতে যদি সারাটা রাত কাটিয়ে দিই, তারপরে ভোর বেলা, তুমি আর আমি বাড়ী ফিরলাম, কেমন হবে?"  - "খুব ভালো হবে। কাল থেকে কলেজে বাবা আমার আসা বন্ধ করে দেবে। তুমি তো তাই ই চাইছো, তাই না?"  -- "আমি চাইছি এখন একটা দমদার কিস। কিন্তু তুমি তো রাজী হোচ্ছো না।"  - "কিভাবে চুমু খেতে হয় ওটা আমি জানি না তো, ওগুলো তো তুমি পারো।"  -- "তাই বুঝি? তাহলে মাথাটা নিচু করো, আমি একটা চুমু খেয়ে দেখাই তোমাকে। এমন চুমু খাবো, তোমার দেহ ভেদ করে একেবারে শিরার ভেতরে গিয়ে প্রবেশ করবে। এমনকি তোমার অস্থিমজ্জায় গিয়ে সেটা নাড়া দেবে।"  - "এই না। এখানে নয়। কেউ দেখে ফেলবে না? কি অসভ্য তুমি।"  -- "যা বাব্বা চুমু খেতে চাইলেই কেউ অসভ্য হয়ে যায় নাকি? ওটা তো প্রেমিক প্রেমিকার সহজাত প্রবৃত্তি। ভালোবাসা যদি প্রগাঢ হয়, তখনই তো চুমু। তুমি আমাকে চুমু খাবে, আমি তোমাকে চুমু খাবো। তখনই তো ভালোবাসা আরো নিবিড় হবে।" বিদিশা হঠাই প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিলো, আমাকে বললো, "এই জানো..... সৌগতটা কি অসভ্য? শুক্লাকে কি বলেছে....."  -- "কি বলেছে সৌগত?"  - "শুক্লা কালকে আমাকে বললো, ওকে নিয়ে নাকি দুদিন আগে বোটানিকাল গার্ডেনে ঘুরতে গিয়েছিল সৌগত। গাছতলায় শুক্লাকে পেয়ে ওর সারা শরীরটায় চুমু খেয়েছে।"  -- "ভালোই তো করেছে। আমি হলেও তাই করতাম। সৌগত ঠিক কাজ করেছে।"  - "আর ও যে নামকরণ গুলো দিয়েছে, তুমি হলে কি দিতে?" আমি একটু অবাক হলাম, বিদিশাকে বললাম, "নামকরণ? কিসের নামকরণ?" বিদিশা বললো, "শুক্লা ওকে নাকি বলেছে বোটানিকাল গার্ডেন্সে গিয়ে ওকে জড়িয়ে সৌগত নাকি এমন চুমু খাওয়া শুরু করেছিল, শুক্লার খুব সেক্স উঠে যায়, আমাকে বললো, জানিস বিদিশা, সৌগত এমনভাবে আমার বুকে চুমু খেতে শুরু করেছে, দেখি আমার জামার বোতামও খুলে ফেলেছে বেশ কয়েকটা। চুমু খেতে খেতে আমাকে বললো, শুক্লা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তাই তোমার শিহরণ জাগানো এই শরীরটায় প্রতিটায় জায়গায় আমি একটা করে চুমুর স্পর্শ দেবো, আর সেই সাথে আমার মত করে আমি এই এই জায়গাগুলোর একটা একটা করে নামকরণ দেবো।" বিদিশাকে বললাম, "সৌগত নামকরণ করবে..... তাই? ব্যাপারটা কিরকম?" বিদিশার কোল থেকে মাথা তুলে আমি তখন উঠে বসেছি, সৌগতর দেওয়া ওই নামগুলো শোনার জন্য উসখুস করছি। বিদিশা বললো, "কি অসভ্য। শুক্লার বুক কিছুটা বেরিয়ে পড়েছিলো বলে ওখানে চুমু খেয়ে বলেছে, ওকে বলেছে, এটা হলো, উঁকি-মারা-মহাশয়, স্তন দুটোর মাঝখানে মুখ গুঁজে বলেছে, এটা হলো আমার বেড়াবার জায়গা। আর চুমু খেয়ে শুক্লাকে প্রায় পাগল করে সবশেষে ওকে বলেছে, যেদিন তুমি আমাকে যাবার পথটা (যোনী) দেখিয়ে দেবে, সেদিন তোমাকে আমি স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে দেবো।" বিদিশার মুখ থেকে, শুক্লাকে দেওয়া সৌগতর ওই নামকরণ গুলো শুনে আমি হাসতে লাগলাম। বিদিশা বললো, "তুমি হাসছো?"  -- "হ্যাঁ, আমিও ভাবছি, ওরকম কিছু নামকরণ দেওয়া যায় নাকি?"  - "আর নামকরণ করতে হবে না মহাশয়। চলো এবার বাড়ী চলো।"  -- "আচ্ছা বিদিশা তুমি কি এমন একটা চুমু আমাকে খেতে পারো না? যেটা এখনো অবধি কোনো প্রেমিকা তার প্রেমিককে খায় নি। চুমুর মধ্যে বেশ উৎকৃ্ষ্টতা মেশানো থাকবে, অনেকক্ষণ ধরে সেই চুমুর রেশ থাকবে, মিষ্টতা থাকবে, সোহাগ থাকবে, আর আমি যতক্ষণ না তোমাকে না করছি, তুমি চুমু খেতেই থাকবে।"  - "বুঝেছি, বুঝেছি, এবার তোমাকে আমায় ফেলেই এখান থেকে চলে যেতে হবে। ঠিক আছে তুমি এখন ঘাসের ওপর শুয়ে থাকো। আমি যাচ্ছি।"  -- "এই বিদিশা, যেও না দাঁড়াও। আমি আসছি।"
Parent