চাঁদের অন্ধকার_Written By Tumi_je_amar [ডাঃ সুধীর রাও - মায়িল (চ্যাপ্টার ১৯ - চ্যাপ্টার ২১)]
চাঁদের অন্ধকার
Written By Tumi_je_amar
ডাঃ সুধীর রাও - মায়িল (১৯)
সুধীর হ্যাঁ বলতেই মায়িল গাড়ি এক ধারে রাস্তা থেকে নামিয়ে দেয়।
সুধীর – কি হয়েছে?
মায়িল – আমার একটু তোকে ভালবাসতে ইচ্ছা করছে
সুধীর – এখন এখানে?
মায়িল – হ্যাঁ এখানে
সুধীর – অন্য গাড়ি গেলে তারা তো দেখবে
মায়িল – আন্য গাড়ি মানে দু একটা ট্রাক যাবে, ওরা দেখলে দেখবে
সুধীর – কাল রাতে তো করলাম, এখন আবার কেন?
মায়িল – তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস, একবার দ্যাখ আমি কেমন
সুধীর – আমি জানি তুই কেমন, তাই তো তোকে ভালোবাসি
মায়িল – সেই জন্যেই তো ভালবাসতে ইচ্ছা করছে
সুধীর – ঠিক আছে যা ইচ্ছা কর
তখনও সূর্য ভালো করে ওঠে নি। চারপাশে আবছা আলো। মায়িল চুমু খায় সুধীরকে। সুধীর অলস ভাবে বসে থাকে।
মায়িল – চল একটু ঘুরে আসি
সুধীর – কোথায়?
মায়িল – চল না, গাড়ি লক কর ভালো করে।
সুধীর কোন কথা না বলে গাড়ি লক করে। মায়িল ওর শাড়ি পরে নেয়। আবছা আলোয় মায়িলকে লাল শাড়িতে দেখে সুধীর হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। মায়িল ওর হাত ধরলে ওর সম্বিত ফেরে। ওরা রাস্তার ধারে ঝোপের মধ্যে চলে যায়। মায়িল কিছু খুঁজে বেড়ায়, সুধীর জিজ্ঞাসা করলে ওকে ধৈর্য ধরতে বলে। দশ পনেরো মিনিট ইতস্তত ঘোরার পর মায়িলের মুখ হাসিতে ভরে ওঠে।
মায়িল – পেয়েছি
সুধীর – কি পেলি
মায়িল – যা খুঁজছিলাম
সুধীর – কিন্তু সেটা কি?
মায়িল – দ্যাখ
সুধীর দেখে একটা ঝোপের মধ্যে সাদা আর নীল রঙ মেশানো ফুলে ভর্তি কোন নাম না জানা ফুলের লতা। মায়িল বেশ অনেকগুলো ফুল সুদ্ধ লতা ছিঁড়ে নেয়। সেই লতা জড়িয়ে দুটো মালার মত বানায়।
মায়িল – চল
সুধীর – কোথায়?
মায়িল – চল না আবার একটু খুঁজতে হবে
ডাঃ সুধীর রাও - মায়িল (২০)
সুধীর কিছু না বলে মায়িলের হাত ধরে এগিয়ে যায়। একটা ছোট্ট জলাশয়ের ধারে একটা একটু বড় মত পাথরের সামনে মায়িল হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
মায়িল – আমার সাথে আমার মত করে বস
সুধীর কিছু না বলে হাঁটু গেড়ে বসে
মায়িল – এই হল আমাদের শিব ঠাকুর।
সুধীর – এটা কি করে শিব ঠাকুর হবে?
মায়িল – তুই জানিস শিব ঠাকুর কেমন দেখতে?
সুধীর – আমরা কেউই জানি না কোন ঠাকুর কেমন দেখতে। আমরা শুধু একটা ছবি কল্পনা করে নেই
মায়িল – তো এই পাথরকে আজ শিব ঠাকুর কল্পনা কর।
সুধীর – ঠিক আছে করলাম।
মায়িল – চল দুজনে একসাথে প্রনাম করি
সুধীর আর মায়িল একসাথে ওই পাথর রুপী শিব ঠাকুরকে প্রনাম করে। দুজনে উঠে দাঁড়ায়। মায়িল ওর হাতের একটা মালা সুধীরকে পড়িয়ে দেয়।
মায়িল – তুই আর একটা মালা আমাকে পড়িয়ে দে
সুধীর কিছু না বলে মায়িলকে মালা পড়িয়ে দেয়। ও বুঝতে পারে মায়িল কি করতে চায়। ওরা দুজনে তিনবার মালা অদল বদল করে।
মায়িল – আজ আমাদের বিয়ে হল। তুমি আজ থেকে আমার স্বামী। আজ থেকে আর তুই করে নয় তুমি করে কথা বলবো।
সুধীর – মায়ের বাধ্য মেয়ে! কিন্তু এই বিয়ে তো কেউ মানবে না
মায়িল – আমার ভারী বয়ে গেছে তাতে। সব বিয়ের নিয়মই মানুষের কল্পনা থেকে বানানো। আসল বিয়ে হল মনের বন্ধন। সে আমার আর তোমার অনেক আগেই হয়ে গেছে। আমরা আমাদের বানানো নিয়মে বিয়ে করলাম।
সুধীর – সমাজ এ বিয়ে মানবে না
মায়িল – সমাজের জন্যে, তোমার বাবা মা আর আমার মায়ের জন্যে সময় আসলে সামাজিক বিয়ে করে নেবো।
মায়িল সুধীরকে নিয়ে সেই ফুলের ঝোপের কাছে যায়।
মায়িল – চলো এখানে আমাদের ফুলশয্যা করি।
সুধীর – এখানে অনেক পোকা মাকড় থাকতে পারে
মায়িল – তুমি না গ্রামের ছেলে। এই ঝোপ কে দেখে ভয় পাচ্ছ! আমার ব্যাগে মোটামুটি অসুধ আছে। সাপে কাটার ইনজেকশনও আছে। তাই ভয় না পেয়ে চলো এখানে ফুল শয্যা করি।
মায়িল সুধীরকে টেনে নিয়ে ফুলের ঝোপের পাশে শুয়ে পড়ে। মায়িল সুধীরকে আদর করতে করতে ওর জামা প্যান্ট খুলে দেয় আর আর নিজেও সব কিছু খুলে ফেলে।
সুধীর – এই ঝোপের মধ্যে ল্যাংটো হবি?
মায়িল – জামা কাপড় পড়ে ফুলশয্যা হয় নাকি? আর তোমার তো জঙ্গলে চুদতেই বেশী ভালো লাগে।
সুধীর আর কিছু বলে না। দুজনে হারিয়ে যায় একে অন্যের মধ্যে। কতক্ষন ওরা ভালোবাসা বাসি করে কে জানে। পূর্ব আকাশে সূর্য উঠলে ওদের চোখে আলো পড়ে। দুজনেই উঠে পড়ে আর জামা কাপড় পড়ে নেয়। দুজনেই তাকিয়ে দেখে কিছু ছেলে এক পাল গরু নিয়ে যাচ্ছে। গরুর খুরে ধাক্কায় ধুলো উড়ে চার পাশ ভরে গ্যাছে।
সুধীর – সবাই গোধুলি লগ্নে বিয়ে করে
মায়িল – হ্যাঁ আমরা সকালের গোধূলি লগ্নে বিয়ে করলাম।
সুধীর মায়িলের হাত ধরে ওদের শিব ঠাকুরের কাছে যায়। আবার প্রনাম করে পাথরটা হাতে তুলে নেয়।
মায়িল – কি করবে?
সুধীর – তোমার শিব ঠাকুরকে ছেড়ে যাবো কেন?
মায়িল – কোথায় নিয়ে যাবে?
সুধীর – আমার মায়িল মনা যেখানে থাকবে আমাদের শিব ঠাকুরও সেখানে থাকবে।
মায়িল – তোমার মায়িল মনে আর আমার সুধীর সোনা এক জায়গাতেই থাকবে।
সুধীর – আমি ভগবানের কাছে সেই প্রার্থনাই করেছি।
মায়িল – আমার শুধু সিঁদুর পড়া হল না
সুধীর – সিঁদুর পড়লে মাকে কি উত্তর দেবে
মায়িল – সেটা ঠিক। এখন না পড়াই ভালো। কলেজে ফিরে গিয় সিঁদুর লাগিয়ে নেবো।
দুজনে ফিরে আসে ওদের গাড়িতে। পেছনের সিটে একটু জায়গা করে সুধীর শিব ঠাকুর রাখে। মায়িল ওর সামনে ওর গলার মালা খুলে রাখে।
সুধীর – মালা খুলে ফেললে?
মায়িল – ওই মালা পড়ে গেলে লোকে পাগল বলবে।
সুধীরও ওর মালা খুলে শিব ঠাকুরের সামনে রেখে দেয়। তারপর গাড়িতে বসে চালাতে শুরু করে।
ডাঃ সুধীর রাও - মায়িল (২১)
ওরা বেলা দুটোর সময় রায়ডান্ডি পৌঁছায়। বাড়িতে সুধীরের বাবা মা জানত যে সুধীর আসবে কিন্তু ওরা জানত না মায়িলকে সাথে নিয়ে গাড়িতে আসবে।
কঞ্জরি দেবী – ও মা তিন্নিকে সাথে নিয়ে এসেছিস, এসো মা এসো।
গণেশ রাও – গাড়ি করে এতো দূর চালিয়ে এলে?
সুধীর – এতো জিনিস কিভাবে আনবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই মায়িল বলল ওর গাড়িতে নিয়ে আসতে
গণেশ রাও – এতো টা রাস্তা কি তিন্নি চালিয়ে আনলো?
মায়িল – আমি চালিয়েছি আর আপনার ছেলেও চালিয়েছে
গণেশ রাও – ও আবার গাড়ি চালাতে জানে নাকি
মায়িল – আমার গাড়িতেই চালানো শিখেছে
কঞ্জরি দেবী - কি লক্ষ্মী মেয়ে আমার
সুধীর – আর ছেলেটা একটুও লক্ষ্মী না
কঞ্জরি দেবী - আমার ছেলে কেমন সেটা কি আর আমি জানি না
গণেশ রাও – তাও তোমাদের এতোটা রাস্তা গাড়ি চালিয়ে আসা উচিত হয়নি
মায়িল – বাবা আমি অনেকদিন ধরে গাড়ি চালাই আর আমার এতো দুরের রাস্তায় অভ্যেস আছে
গণেশ রাও – আগে যা করেছো সেটা আলাদা। এখন আমার একটা দায়িত্ব আছে।
মায়িল – এই দায়িত্ব যদি আগে কেউ নিত তবে আমি অন্য রকম হতাম
কঞ্জরি দেবী - আমাদের এই তিন্নিই ভালো লেগেছে। এখন থেকে আমাদের কথা চিন্তা করবে
মায়িল – ঠিক আছে মা। এই তুমি হাত মুখ ধুয়ে নাও। তানিকে ওর খবর দিতে হবে।
সুধীর – এই যাচ্ছি। তুমিও হাত মুখ ধুয়ে বিশ্রাম নাও।
কঞ্জরি দেবী – কিসের খবর
সুধীর – তানির একটা কাজের ব্যবস্থা করেছি আমাদের কলেজে। পরশু ফেরার সময় ওকে নিয়ে যাবো।
কঞ্জরি দেবী – খুব ভালো কথা
মায়িল – যাও তুমি তানিকে বলে এসো
কঞ্জরি দেবী – এই তোরা দুজন আগের বার তুই তুই করে কথা বলছিলি। এবার তুমি করে কথা বলছিস কেন?
মায়িল – তুমিই তো বললে বিয়ের পরে তুই করে না বলতে
কঞ্জরি দেবী – সে তোদের বিয়ে হয়ে গেছে নাকি?
সুধীর – হ্যাঁ, মানে না হয়নি। কিন্তু হবে তো।
মায়িল – আর মনে মনে আমরা তো স্বামী স্ত্রী তাই।
কঞ্জরি দেবী – আমি বুঝি না বাবা তোদের হাব ভাব
গণেশ রাও – সে সব ঠিক আছে। তুই করে কথা বলো আর তুমি করে বলো, কিছুই যায় আসে না। শুধু একে অন্যের প্রতি সন্মান আর ভালোবাসা থাকলেই হল। তবে তোমাদের মধ্যে এই ম্যাচিওরিটি আছে দেখে খুব ভালো লাগলো।
সুধীর আর মায়িল দুজনেই বাবা মাকে প্রনাম করে। সুধীর সব জিনিস পত্র নামিয়ে রাখে। শেষ মায়িল ওদের শিব ঠাকুর আর মালা দুটো নিয়ে ঘরে টেবিলে রাখে।
কঞ্জরি দেবী – এই পাথরটা কোথা থেকে নিয়ে আসলি?
মায়িল – রাস্তায় এক জায়গায় থেমে ছিলাম। সেখানে এই পাথরটা দেখে আমাদের খুব ভালো লাগে। জঙ্গল থেকে ফুল নিয়ে দুজনে এঁর পুজা করি। এই পাথরটা আমাদের শিব ঠাকুর।
কঞ্জরি দেবী – শিব ঠাকুর তো ঠাকুরের আসনেই রেখে দে।
মায়িল – ঠিক আছে মা।